জাবিতে আবারও শুরু উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন
১২ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:১১
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’- এর কারণে দুইদিন স্থগিত থাকার পর আবারও উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ১১টায় থেকেই পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেখানেই ‘উপাচার্যের দুর্নীতি’, আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাসহ নানা বিষয়ে ৬০ গজ কাপড়ের মধ্যে ব্যঙ্গাত্মক ক্যানভাস প্রদর্শনের মাধ্যমে আজকের কর্মসূচি শুরু হয়।
এরপর বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে উপস্থিত সবাই। এরপর ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’- এর ব্যানারে শুরু হয় পূর্ব নির্ধারিত সংহতি সমাবেশ
।
এদিকে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। দুপুর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথ বন্ধ করে শিক্ষার্থী ব্যতীত কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কারও আত্মীয় থাকলে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নাম লিখে প্রবেশ করতে হয়েছে। সকালের দিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দুপুরের পর আন্দোলনকারীদের বাধার কারণে প্রশাসনিক কাজও বন্ধ হয়ে যায়।
সংহতি সমাবেশে বক্তারা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে ও দুর্নীতির দায়ে উপাচার্যের অপসারণ দাবি করেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি অলিউর রহমান সান বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি (ভিসি) আরও বড় একটি অনিয়ম করলেন। দুর্নীতি ঢাকতে এভাবে গণতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে তিনি একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন।’
এসময় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘উপাচার্যের বক্তব্যেই প্রমাণ হয় তিনি দুর্নীতি করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন ‘ছাত্রলীগ আমার কাছে প্রকল্পের ছয় শতাংশ চেয়েছিল। এখানে দুই শতাংশ অনেক কম!’
‘তার মানে হলো উপাচার্য দুই শতাংশ দিতে চেয়েছেন কিন্তু ছাত্রলীগ বেশি দাবি করায়ই বিপত্তি বেঁধেছে। ফলে সেটিই প্রমাণ করে তিনি দুর্নীতি করেছেন।’
তিনি বলেন, আর সব কিছু বাদ দিলাম, সেদিন শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হলো তার জন্য হলেও উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত।’
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, ‘উপাচার্য এবং তার প্রশাসন পরাজয় মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। যদি তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়ের পথে থাকত তাহলে জোরপূর্বক ক্যাম্পাস বন্ধ করত না।’
‘এটি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, এটি অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন’- জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখনও আপনারা সেখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পান। গোপালগঞ্জের উপাচার্যও আন্দোলন ঠেকানোর জন্য স্বৈরাচারী কায়দায় ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তারও পতন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে যখন আন্দোলন হচ্ছে, তখন ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এরপর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আশ্রয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যখন অভিযুক্ত উপাচার্যের পক্ষ নেয়, তখন এর চেয়ে খুবই দুঃখজনক আর কিছু হয় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি তৈরির জন্য কে দায়ী?- প্রশ্ন তুলে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় স্থবির। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা সবাই জানি এর জন্য দায়ী বর্তমান উপাচার্য।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। তার কথা মতো ছাত্ররা যে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে এবার সেটি যাচাই বাছাই করুন। আর আন্দোলনকারীরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এই ঐক্যই আপানাদের বিজয় নিশ্চিত করবে।’
সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও জহিরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মোহাব্বত হোসেন খান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, রাখাল রাহা (রাষ্ট্রচিন্তা), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।