মন্দবাগ ট্র্যাজেডি: স্বামীর দাফন শেষে ফেরার পথে স্ত্রীর মৃত্যু
১৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৭
ঢাকা: চট্রগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিন। এলাকার জাহাজ ভাঙ্গা কারখানার এই চাকুরে গেল ৭ নভেম্বর কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মারা যান। তাকে গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দাফন শেষে মঙ্গলবার রাতে উদয়ন এক্সপ্রসে করে চার সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে ফিরছিলেন মুসলিমের স্ত্রী জোহরা খাতুন। কিন্তু এদিন ভোর পৌনে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান জোহরা। এতে গুরুতর আহত হয় তার মা সুরাইয়া বেগম ও তার তিন সন্তান -সুমি, মিম ও ইমন। হাসপাতালে ভর্তি জোহরার স্বজনরা কেউই তার মৃুত্যুর খবর এখনও পর্যন্ত জানেন না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত জোহরা বেগমের ভাই মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, জোহরা তার চার ছেলেমেয় ও তাদের নানীকে নিয়ে স্বামীর দাফন দাফন শেষে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের বাড়ি শ্রীমঙ্গল থেকে উদয়ন এক্সপ্রসে করে চট্রগ্রামে ফিরছিল। কিন্তু আমার বোনের আর ফেরা হল না। শোক করব কি। বোনের দাফনেও যেতে পারিনি। মা আর ভাগ্নে-ভাগ্নিকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছি। একজনের কোমর ভেঙেছে , একজনের পা। ছোট ভাগ্নিটার মাথায় বড় আঘাত আছে। এমন বিপদে যেন কেউ কোনদিন না পড়ে।
তিনি বলেন, আমার বড় ভাগ্নি সুমি চট্রগ্রাম বিজয়স্মরণী কলেজের একাদশের পরীক্ষার্থী সোমা আক্তার সুমি। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সুমিকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) আনি। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পরে আবার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সুমির মাথায় আঘাত ছাড়াও দুই পা ভেঙ্গেছে এই দুর্ঘটনায়।
তিনি বলেন, সুমি আর তার ভাইবোনরা এখনও জানেনা তাদের মা জোহরা খাতুন মারা গেছেন। ওরা জানে তাদের মা অন্য হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
মোহাম্মদ আলী জানান, সুমির ভাই ইমন ও নানী সুরাইয়া বেগম পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর ওদের বোন মিমকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রথমে। তবে তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। আহত সুমিকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে সন্ধ্যার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার দুই পা ভেঙ্গে গেছে। মাথায় আঘাত ছিল। পরে ঢামেক হাসপাতাল থেকে মাথার পরীক্ষা শেষ করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। অনেকেই মারা গেছে। অনেকেই আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি আছে। সন্ধ্যায় সুমি নামের এক মেয়ে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ঢামেক হাসপাতালে আসে। তার দুই পা ভেঙ্গে গেছে। তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। মাথায় কোন সমস্যা নেই। তাকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা।
এদিকে পঙ্গু হাসপাতালে থাকা সুমির আরেক মামা মোহাম্মদ ওমর সারাবাংলাকে বলেন, সুমির আরেক ভাই সুমনও ট্রেনে ছিলেন ওদের সঙ্গেই। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি অন্য বগিতে ছিলেন বলে অক্ষত রয়েছেন। সে এখন তার মা জোহরা খাতুনের দাফনের জন্য বাড়ি গেছে।
পঙ্গু হাসপাতালে বেডে শুয়েই ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন সুমিদের নানী মা সুরাইয়া খাতুন। পাশের বেডে ভর্তি ইমনও তীব্র ব্যথায় ছটফট করছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ট্রেনে দুর্ঘটনার পর আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ৯ জন রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। শুরুর দিকে দুই-তিনজনের অবস্থা একটু গুরুতর ছিল। তবে এখন সবার অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই সেরে উঠবেন বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোর পৌনে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সাথে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় সর্বশেষ ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।