‘প্রতিবন্ধিতা অবহেলার নয়, মানব বৈচিত্র্যেরই অংশ’
১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:১৪
‘শুধু সভা-সেমিনারে আলোচনা কিংবা আইন দিয়ে প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষমতায়ন সম্ভব না। বরং তাদের প্রতি সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সহমর্মিতা দিয়ে তাদের কষ্ট বুঝতে হবে। আমরা যারা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে জন্মেছি, আমাদের উচিত শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিকে হাত বাড়ানো।’
‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী নারীর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব উম্মে সালমা তানজিয়া এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর আয়োজনে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের অনলাইন প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সিং, সঙ্গীত, পড়াশোনাসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা দরকার। তাহলে কর্মক্ষেত্রে তারা অনেক সুযোগ পাবে। এছাড়া অর্থনৈতিকক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য প্রশাসনিকভাবেও কাজ করতে হবে। এজন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করতে হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিষয়ে যে সকল কার্যক্রম চলছে তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ করেন বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি সালমা মাহবুব। তিনি বলেন, বেশিরভাগ প্রকল্প সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায়। প্রতিবন্ধী নারীকে কর্মদক্ষ ও ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবন্ধিতা অবহেলার নয়, মানব বৈচিত্র্যেরই অংশ।
অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বি-স্ক্যানের সমন্বয়কারী ইফতেখার মাহমুদ এবং অনুষ্ঠানের সহযোগী সংগঠন প্ল্যান ইন্টারনেশন্যাল বাংলাদেশ এর ক্যাপাসিটি ব্লিডিং স্পেশালিস্ট সাব্বির আহমেদ বলেন, এদেশের উন্নয়ন ধারায় বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী নারীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। আর এর পেছনে অন্যতম তিনটি বাধা হলো পেশায় প্রবেশগম্যতা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ও দক্ষতায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির অভাব। এই বিষয়গুলোতে আলো ফেলাই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গাজীউদ্দীন মোহাম্মদ মুনীর বলেন, অনেক প্রকল্পে প্রতিবন্ধী নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়।
মুক্ত এই আলোচনায় অংশ নেওয়া ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলোপার সগীর হোসেইন খান বলেন, নারী বিষয়ক বাজেটে প্রতিবন্ধী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যে সকল প্রতিবন্ধী নারী কর্মজীবী, তাদের সন্তানের জন্য কর্মক্ষেত্রে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র তৈরি করা জরুরি।
ডিসএ্যাবল চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান বলেন, মহিলা ও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রকল্পে চার বছর ধরে কাজ করে দেখেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম।
অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. এস এম আবুল কাশেম। এছাড়া কয়েকটি এনজিও ও প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।