সংসদেও ঝাঁজ ছড়ালো পেঁয়াজ, ষড়যন্ত্র দেখছেন এমপিরা
১৪ নভেম্বর ২০১৯ ২০:৪৯
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা। তারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করতে বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এসবের পাশাপাশি সংসদ সদস্যরা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা তা খুঁজে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টির তুলে ধরেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। এরপর আলোচনায় অংশ নেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্ন। তারা পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানান।
বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এত সুদক্ষ একটি মন্ত্রিসভা, তার দুজন মন্ত্রী এখানে আছেন। তাদের অনুরোধ করতে চাই, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে গেছে। জনগণের মধ্যে একটা রিঅ্যাকশন হচ্ছে। আজকে পর্যন্ত যে খবর আছে, প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে পেঁয়াজের কেজি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এত জনপ্রিয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। কী কারণে প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম? বাণিজ্যমন্ত্রী যখন সংসদে বলেন, পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নামবে না, তখন তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। তাই অনুরোধ করব, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে বলেছেন। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? ব্যাপারটা বোধগম্য না। আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন, পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করবেন না। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
নাসিম বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মানুষের মধ্যে রিঅ্যাকশন খারাপ হবে।’
সংসদে আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল হলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দাম একটু বেড়েছে। একটু না, আজকে পত্রিকায় দেখলাম ২০০ টাকা কেজি। এটি কোনোদিন আমরা ভাবিনি।’
অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীকে বলব, যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের সুযোগ-সুবিধা দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের যখন কোনো একটা পণ্যের দাম বাড়ে আমরা তার ওপর কর কমিয়ে দেই। আমি মনে করি, এ মুহূর্তে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য অন্তত কিছুদিনের জন্য পেঁয়াজের কর শূন্য করে দেন। আমি যখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম কয়েক ঘণ্টার জন্য লবণের দাম বেড়েছিল তখন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তাকে অনুরোধ করার পর ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছিলেন। এই খবর পরিবেশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরকম একটা ঘোষণা দেন যে, পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক লাগবে না। তাহলে দেখবেন বাজারে এর ইতিবাচক একটি প্রভাব পড়বে।’
সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বাজারে কিন্তু পেঁয়াজ আছে। বেশ পেঁয়াজ আছে। দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণ নেই। গতকাল ছিল ১৫০ টাকা কেজি আজ ২০০ টাকা কেজি। এইভাবে যদি দাম বাড়ে তাহলে বলব এটি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত পরশু দিন বাণিজ্যমন্ত্রী সংসদে এক প্রশ্নে বলেছেন পেঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই কথা বলার পরদিন গতকাল হয়ে গেল ১৫০ টাকা আর আজকে ২০০ টাকা কেজি। খবরে দেখলাম ভারতে কৃষক কান্না করছে, পেঁয়াজের মূল্য ৮ টাকা কেজি।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এত ভালো সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের পরে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চই পেঁয়াজ আনার জন্য ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নিতেন তাহলে মনে হয় ক্রাইসিসটা থাকত না। পেঁয়াজ নেই এরকম তো না। সরকারের বদনাম হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলব, বের করুন এটা ষড়যন্ত্র কি না? মানুষ যে কিনতে পারে না, শুধু তাই না সরকারের বিরাট একটা বদনাম হচ্ছে। পাঁচটা ভালো কাজও ম্লান হয়ে যায় একটি খারাপ কাজের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মাদকসেবী বন্দুকযুদ্ধে মরে যান। এরকম পেঁয়াজের মূল্য যারা বৃদ্ধি করে ওরা বন্দুকযুদ্ধে মারা যাক না। এরকম হলে একটি উদাহরণ তৈরি হবে। জরুরি ভিত্তিতে অভিযান চালানো হোক।’
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’