শুক্রবার দেশে ফিরছেন সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার
১৪ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৪০
ঢাকা: সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উদ্ধারে আকুতি জানানো সুমি আক্তার দেশে ফিরবেন শুক্রবার ( ১৫ নভেম্বর)। এয়ার এরাবিয়া G9-517 বিমানযোগে শুক্রবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ( ১৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির কর্মকর্তারা। তারা সারাবাংলাকে জানান, সুমি যে ফ্লাইটে ফিরবেন তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে আরও ৯১ নির্যাতিত নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরবেন।
সুমির স্বামী নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সি রূপসী বাংলা ওভারসিজ এর মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়ার পর সুমিকে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর চাকরি দেওয়া হয়। ওই বাড়ির মালিক তাকে ঠিকমতো খেতে দিতো না। কথায় কথায় মারধরসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। দেশে পরিবারের সঙ্গেও তাকে কথা বলতে দেওয়া হতো না। তার হাতে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সব ঘটনা শোনার পর সুমিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সুমির স্বামী বাদী হয়ে তাকে সৌদি আরবে পাঠানো প্রতিষ্ঠান রূপসী বাংলা এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান এ প্রসঙ্গে জানান, সৌদিতে নিয়োগ কর্তার নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারকে সেখানে নির্যাতন করা হতো।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সৌদি আরবের শ্রম আদালত সুমির পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে সুমিকে আর কফিলের দাবি করা টাকা দিতে হবে না। বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি রূপসী বাংলা ওভারসিজ তাকে বিমানে করে আনার টাকাসহ অন্যান্য খরচ দিয়েছে।’ তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় গৃহশ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক না পাঠিয়ে নার্স, পোশাক শ্রমিক বা অন্যকোনো পেশায় নারীদের পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে সুমিকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে এক ভিডিও বার্তায় উদ্ধারের আকুতি জানায় ফেইসবুকের মাধ্যমে। যা সকলের নজরে আসে। ওই ঘটনার পরে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। তবে সৌদি আরবে সুমির নিয়োগকর্তা তাকে দেশত্যাগের অনুমতি না দেওয়ায় আইনি জটিলতায় আটকে যায় তার দেশে ফেরা। সৌদি আরবে গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে দেশে ফেরাতে ট্রাভেল এজেন্সি ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’কে বিমানের টিকিটসহ ২২ হাজার রিয়াল (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) দেওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে গত ৫ নভেম্বর অনুরোধ করে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল।
এরপর জেদ্দার বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রম আদালতে এ বিষয়ে একটি শুনানির আয়োজন করে। এরপর দেশটির নাজরান শহরে অবস্থিত শ্রম আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সুমি আক্তারের নিয়োগকর্তা, সুমি আক্তার ও কনস্যুলেট প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে কফিলের দাবিকৃত ২২ হাজার সৌদি রিয়েল পরিশোধের আবেদন নামঞ্জুর হয়। পাশাপাশি কনস্যুলেটের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুমি আক্তারকে কফিল কর্তৃক ‘ফাইনাল এক্সিট’ দেওয়ার দাবি শ্রম আদালত মঞ্জুর করেন।
গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি আক্তার (২৬)। তিনি ও তার পরিবার জানতে না বিদেশে পাঠানোর নামে তাকে বিক্রি করা হচ্ছে। সৌদি আরব যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন। সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা বলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সুমি। পরবর্তী ভিডিওটি ভাইরাল হয়। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসলে মুক্তি পান সুমি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে তিন লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন নারী কর্মী। এদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার কর্মী নির্যাতনসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসেন।