কাঁচা ইটকে মাটির স্তূপে পরিণত করেছে ‘বুলবুল’
১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:০১
ভোলা: ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ভোলার ১২০টি ইট ভাটা। সবমিলিয়ে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এসব ইট ভাটায়।
সরেজমিনে দেখা গেল, টানা বর্ষণ ও ঝড়ে ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঁচা ইট মাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে। অথচ কয়েকদিন আগেও এসব ভাটাগুলোতে সারি সারি কাঁচা ইট সাজানো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সেসব ইট ভিজে মাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে।
বুলবুলের আঘাতে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ইট ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, এতে নতুন ইট উৎপাদন অন্তত দু’মাস পিছিয়ে যাবে। চলতি মৌসুমে এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে ইটের দামের ওপর।
ভোলার সাতটি উপজেলায় মোট ১২০টি ইট ভাটা রয়েছে। সবগুলো ভাটাতেই চলছিলো নতুন ইট তৈরির কাজ। চলতি মাসের শেষের দিকেই ইট পোড়ানো শুরুর কথা ছিলো। কিছু ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বুলবুলের প্রভাব থেকে শেষ রক্ষা হয়নি।
ইটভাটাগুলোতে শ্রমিকরা এখন ভিজে মাটিতে পরিনত হওয়া স্তূপগুলো সরানোর কাজ করছেন। কোনো কোনো ইট ভাটায় এখনো শ্রমকিরা কাজ শুরু করেনি। ঝড়ের কারণে গত এক সপ্তাহ বসে থেকে অনেক শ্রমিকই বাড়ি ফিরে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে কাজে ফিরতে তাদের হয়ত আরও এক থেকে দেড় মাস লাগবে।
মায়ের দোয়া ও সাবাব ব্রিকস এর মালিক আমির হোসেন জানান, ঝড়ে তার দুইটি ফিল্ডের ১৩ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। ইট পোড়ানোর জন্য আনা কয়লাও জোয়ারের পানিতে নদীতে চলে গেছে। এতে তার দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইলিশা ব্রিকস এর মালিক মাকসুদুর রহমান জানান, ঝড়ের আঘাতে তার ফিল্ডের প্রায় ১০ লাখ কাঁচা ইট পাটিতে পরিণত হয়েছে। এতে তার অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তার দুই বছর ইট পোড়ানো লাগবে।
ভোলা সদর উপজেলার রূপালী ব্রিকস ও সুরামা ব্রিকস এর মালিক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন, তার দুইটি ইট ভাটায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। তার দুইটি ইট ভাটায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ কাঁচা ইট মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একতা ও ফ্রেন্ডস ব্রিকস এর মালিক তরিকুল ইসলাম কায়েদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলার সবগুলো ইট ভাটাই ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য শত কোটি টাকা। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য চলতি অর্থ বছরে ইটভাটা মালিকদের আয়কর মওকুফের দাবি জানান তিনি।
তরিকুল ইসলাম আরও জানান, সরকার যদি এ সকল ইট ভাটার মালিকদের আর্থিক সহায়তা, সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ না দেয় ও আগের ঋণের সুদ মওকুফ না করে তাহলে তারা পথে বসে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইট ভাটার মালিকরা যদি তাদের ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে আবেদন করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। যেন তারা সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণসহ আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন।