পদ্মাসেতু ছাড়া ফাস্ট ট্র্যাকের অন্য প্রকল্পগুলোয় ধীরগতি
১৬ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০৭
ঢাকা: ফাস্ট ট্র্যাক বা অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো শক্তিশালী মনিটরিংয়ের কারণে দ্রুত এগুচ্ছে বলে দাবি অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)। প্রতিমাসেই তারা তদারকি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। তাদের সবশেষ গত আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাস্তবায়নের সময় অনুযায়ী পদ্মাসেতু, রামপাল ও মেট্রোরেলের অগ্রগতি এগিয়ে থাকলেও অন্য প্রকল্পগুলো অনেকটাই পিছিয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। তবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সাড়ে ১৮ শতাংশ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রর ৪১দশমিক ২১ শতাংশ, মেট্রোরেল ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের ৫৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ,পদ্মাসেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পের ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং দোহাজারী-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলসংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ২৯ শতাংশ।
ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পগুলোতে খরচ হয়েছে (ক্রমপুঞ্জিত ব্যয়) ৭৯ হাজার ৫৮৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৭ হাজার ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৪২ হাজার ৩৮০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
ইআরডির সচিব মনোয়ার আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে শক্তভাবে তদারকি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে মনিটরিং বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পগুলোর কাজের গতিও আগের তুলনায় বেড়েছে। আশা করছি আগামীতে বাস্তবায়ন হার আরও বাড়বে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
পদ্মাসেতু
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের নদী শাসন কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে এপ্রোচ রোড, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ রোড এবং সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ শেষ হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটির বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে খরচ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৯২৪ কোটি ৮৯ টাকা। প্রকল্পে ১২টি ওয়ার্কিং ডকুমেন্টেশন প্যাকেজ বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। প্রতিটির জন্য মাইলস্টোন অ্যাচিভমেন্ট সার্টিফিকেট স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরইমধ্যে তিনটি প্যাকেজের ইন্সপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অংশে বিভক্ত করে কর্মপরিবল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়ন ও সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এখন পর্যন্ত এতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বাউণ্ডারি ওয়াল, স্লোপ তৈরি, ভূমি উন্নয়ন এবং অফিস কাম আবাসিক ভবনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ইপিসি টানকি কাজ ৪১ দশমিক ২১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
মেট্রোরেল
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৭৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পুর্ত কাজ ৫২ শতাংশ, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের কাজ ৫৫ শতাংশ, আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত ৭টি স্টেশনের কাজ ১৩.২৪ শতাংশ এবং কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৭টি স্টেশনের কাজ ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম সাড়ে ১৬ শতাংশ এবং রেলকোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিকে ১৯টি কম্পোনেন্টে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৭টি কম্পোনেন্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। ৬টি কম্পোনেন্ট পিপিপির মাধ্যমে এবং ৬টি কম্পোনেন্ট জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ৫৯ দশিমক ২৯ শতাংশ, পূর্ত কাজ ৯০ দশমিক ৩০ শতাংশ, জাহাজ নির্মাণ ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ, ডিটেইল মাস্টার প্ল্যান ৩৪ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ রুটে ড্রেজিং শতভাগ, পুনর্বাসন ৩২ শতাংশ এবং প্রশিক্ষণ খাতে ২৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে মোট ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪ হাজার ১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অস্থায়ী পিলার দিয়ে সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজ ৯৪ শতাংশ, পরামর্শক সেবা-সুপারভিশন ২৭ শতাংশ, পরামর্শক সেবা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ৭ শতাংশ, রিসেটেলমেন্ট কার্যক্রম ৩২ শতাংশ এবং এনজিও নিয়োগ ও অগ্রিম প্রদান ১০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প
এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৫২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্যাকেজ ২ এর আওতায় পাওয়ার প্লান্ট এবং পোর্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ ২৮দশমিক ১৩ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতায়নের কাজ ৯৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, ভূমি অধিগ্রহণ শতভাগ, এনজিও কার্যক্রম ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, নগরায়নের জন্য ভূমি উন্নয়ন ১৬ দশমিক ১০ শতাংশসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে চলছে।