ভিউ বাড়াতে ফেসবুক-ইউটিউবে ভিডিও, নজরদারি গোয়েন্দা পুলিশের
১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৯:০১
ঢাকা: কোনো নামি-দামি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করলেই সেগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব ভিডিও সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই দেখছেন এবং শেয়ার দিচ্ছেন। আর এমন সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করতে চায় তথাকথিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মালিকরা।
নামিদামি কোম্পানির নামে সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ভিউ বাড়িয়ে নিজেরা লাভবান হলেও ক্ষতির শিকার হয় দেশীয় শিল্প। ক্ষুণ্ন হয় দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম। এমনকি এসব বিভ্রান্তিকর ভিডিও দেখে ব্যবহারকারী বা ভোক্তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তাই ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়িয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ভিউ বাড়িয়ে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবের মাধ্যমে টাকা আয়ের উপায় হিসেবে নামিদামি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ভিডিও বানিয়ে সেগুলো প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। আর এসব ভিডিও সাধারণ মানুষ দেদারছে দেখছেন এবং শেয়ার দিচ্ছেন। কিন্তু যারা এসব ভিডিও প্রকাশ করছেন, তারা অনেকেই জানেন না তাদের এ সব ভিডিও’র কারণে নামিদামি কোম্পানির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মীর মোদাচ্ছের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি মোনায়েম গ্রুপের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, তাদের প্রতিষ্ঠান ইগলু আইসক্রিমের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখা গেছে, একটি চক্র ভিউ বাড়ানোর জন্য বিভ্রান্তিকর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। উদ্দেশ্য ভিউ বাড়িয়ে ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা। কিন্তু তাদের এমন বিভ্রান্তিকর ভিডিওর কারণে একটা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যেমন সুনাম ক্ষুন্ন হয় তেমনি, চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে একটি শিল্পকে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় ফোরএস নামে একটি ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব আইডি শনাক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পেইজটির অ্যাডমিন সালমান সজীব নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
গ্রেফতারের পর সালমান জানান, তারা শুধু ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে এমনটি করে।
তাদের কখনো ভাবনায় ছিল না যে, এ ধরনের ভিডিওতে একটা শিল্প কিংবা কোম্পানি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ জন্য সে অনুতপ্ত।
‘কিন্তু একটা কোম্পানি বা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে তো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে এসব বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আমাদের দায়িত্ব’ বলেন ডিসি মোদাচ্ছের।
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে-ই এ ধরনের কাজ করবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের উদ্দেশ্য গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করা। কিন্তু সেটি যেন অন্যের কারণ না হয় তাও তাদের ভাবতে হবে।’
জানতে চাইলে মোনায়েম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জি এম কামরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও ইউটিউবে আমাদের ইগলু আইসক্রিম নিয়ে একটা বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওতে বলা হয়, আমাদের আইসক্রিম মানসম্মত নয়। কিন্তু তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। অথচ আমাদের প্রতিটি পণ্য বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক পরীক্ষিত এবং সর্বদা তারা তদারকি করে থাকেন। যার ফলে বাজারজাত করা আমাদের পণ্য মানহীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এমন বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশ করায় বিষয়টি মহানগর পুলিশের সাইবার ইউনিটকে অবহিত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বা যারা ভিডিওটি প্রচার করেছে তারা হয়ত না জেনেই করেছে। কিন্তু এর ফলে গত পঞ্চাশ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হওয়া আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতা বা ব্যবহারকারী কিংবা গ্রাহকের কাছে একটা অনাস্থার সৃষ্টি করবে। কারণ তারা যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে, সেটি প্রায় এক লাখের অধিক শেয়ার হয়েছে ফেসবুকে। এখন সাধারণ মানুষ ভিডিওটি দেখার পরে হয়ত ভাববে সত্যি সত্যি আমাদের পণ্যের মান নেই। অথচ আমরা পণ্যের মান রক্ষায় প্রতিনিয়ত সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুধু আমাদের কেন যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ভিডিও বা তথ্য প্রচার বড় ক্ষতির কারণ।’
তাই এ সব প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।