Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আইসিসি ও আইসিজের এখতিয়ারের বাইরে নয় মিয়ানমার’


১৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:৫২

ঢাকা: মিয়ানমার আইসিসি (নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) ও আইসিজের (জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) সদস্য হোক বা না হোক, এই আদালতের বিচারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে রায় আসবে তা বাস্তবায়ন করতে বিশ্বের সব দেশ বাধ্য থাকবে। যেমন রায়ে যদি অং সান সুচিসহ বা মিয়ানমারের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারের রায় আসে তবে তারা যদি জাপান বা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে থাকে তবে ওই দেশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে বাধ্য।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যে যাই বলুক, মিয়ানমার আইসিসি এবং আইসিজের জুরিসডিকশনের বাইরে নয়। মিয়ানমার আইসিসিতে সই না করলেও আইসিসির রায়ে যা আসবে তা পালন করার দায়িত্ব প্রতিটি রাষ্ট্রের। যদি এই রায়ে এমন কিছু আসে যে এই ঘটনায় অং সান সুচি বা এরা এরা দায়ী বা কোনো ব্যক্তির নাম আসে, মামলার রায়ে যদি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের নির্দেশ থাকে তবে প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের গ্রেফতার করা। কেন না আইসিসি সনদে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রই সই করেছে। তখন যেসব রাষ্ট্র ওই সনদে সই করেছে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আইসিসির রায় বাস্তবায়ন করা।’

‘বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রেখেই সংকটের সমাধান করতে চায়’, উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রেখেছি এবং এই সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চাই। যে কারণে আপনাদের অনেক সমালোচনার পর না আনলেও চাল আমদানির জন্য আমরা সে দেশে গিয়েছিলাম। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে দেশে গিয়ে চুক্তি করে এসেছিলেন। আমরা দ্বিপক্ষিয় সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চাই এবং দায়িত্বশীল আচরণ করতে চাই। জাতিসংঘের একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ইন্সট্রুমেন্টগুলোর রক্ষাকর্তা বা একটি সদস্য রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব সে হিসেবে সক্রিয় সদস্য হিসেবে এই প্রক্রিয়ার প্রসেসগুলোকে সহায়তা করবো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এবং তারা (আইসিসি এবং আইসিজে) যখন যা চাইবে আমরা তাদের সহায়তা করব।’

বিজ্ঞাপন

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন, জাপান ও ভারত বাংলাদেশের বিরোধীতা করছে, বিষয়টি এমন নয়’, উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত দুই বা তিন বছরের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অথবা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কোনো পাবলিক ফোরামে ওপেনলি অং সান সুচিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে নিয়ে এই দুটো দেশ প্রকাশ্যে কিছু বলেছে। কিন্তু এই ঘটনাটা ঘটেছে গত দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে। শিনজো আবে অং সান সুচিকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, প্রত্যাবাসন নিশ্চিত এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকেই ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ঠিক একই ভাষায় আসিয়ান সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই কথা পরিষ্কারভাবে বলেছেন। নরেন্দ্র মোদি আরও বলেছেন যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়া না হলে এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি হবে। এখন এইটা আমাদের অ্যাচিভমেন্ট কিনা সেটা বিচারের দায়িত্ব আপনাদের।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারত অনেকদিন ধরে অনুরোধ করে এসেছে। কিন্তু সরকারের ধারাবাহিকতার অভাবে এবং এসব স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে সস্তা রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোয় দীর্ঘদিন তা হয়নি। বিএনপি-জামাত সরকার এই বিষয়গুলো বিরধীতা করায় আমরা এই অঞ্চলের জিও-পলিটিকেল সম্ভাবনা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিও-পলিটিকেল এই সম্ভাবনাগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার একটি ভিন্ন প্রকৃতির কঠিন রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রটিকে আমরা কতোটুকু বুঝি তাতে সন্দেহ রয়েছে অথচ মিয়ানমার থেকে পঁচা পেয়াজ আমদানি করতে আমরা দৌড়-ঝাপ করছি। নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিচার নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি কিন্তু আগামী ১০ বছরে আমি সংকটের কোনো সমাধান দেখছি না। কেন না এই সংকটের সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের ভয়েজ তৈরি করতে হবে, এই জায়গাতে আমাদের কোনো শক্ত ভূমিকা নাই। আমরা যদি এখনই রোহিঙ্গাদের ভয়েজ সৃষ্টিতে উদ্যোগ না নেই তবে এই অঞ্চলে আরেকটি প্যালেস্টাইন ঘটনার জন্ম নিবে।’

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর এমদাদ বলেন, ‘চীন যতক্ষণ মিয়ানমারকে সমর্থন করে যাবে, ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটের সমধান কষ্টসাধ্য। এই বিষয়ের সুরাহায় শক্ত কিছু করা যাবে না।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘এই সংকট সমাধানের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে চীন। তাই প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীন থেকে কোনো ভূমিকা আসবে কি না তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল, অভিবাসী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির, উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর এমদাদ।

আইসিসি. আইসিজে মিয়ানমার রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর