সম্প্রসারিত হবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সহায়তা দেবে এডিবি-এআইআইবি
২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:৫৭
ঢাকা: ঢাকা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। এজন্য ‘ঢাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৫ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৪১৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ২১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক গ্রিড ব্যবস্থাকে ৯টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনগুলো হলো— ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল।
মন্ত্রণালয় বলছে, ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে ঢাকায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ডেসকো একটি স্বতন্ত্র পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে ডেসকো এলাকার ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদার একটি সমীক্ষা করেছে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী ২০৩০ সালে ঢাকার ডেসকো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট হবে। চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ডেসকো এলাকায় দুইটি ৪০০ কেভি ও একটি ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
এদিকে, পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বরিশাল এলাকায় তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। যার ফলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পের আওতাধীন দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোকে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকহারে বাড়বে।
অন্যদিকে খুলনা শহর মূলত একটি শিল্প এলাকা। এ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) খুলনা এলাকায় বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। খুলনা ও বরিশাল এলাকার ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় দুইটি ২৩০ কেভি, আটটি ১৩২ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট ২৩০ কেভি ও ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।
তাছাড়া রংপুর বিভাগের অধীন হাতিবান্ধা উপজেলায় লালমনিরহাট গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর ফলে এই এলাকায় সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হলে হাতিবান্ধা এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়নের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। এ জন্য পিজিসিবি হাতিবান্ধা ও ডোমার এলাকায় একটি করে দুইটি ১৩২ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট ২৩০ কেভি ও ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ১৩২ কেভি উপকেন্দ্রটি ডোমার এলাকা ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি হাতিবান্ধা উপকেন্দ্রের সোর্স লাইন হিসেবে কাজ করবে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রিড নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এডিবি এবং এআইআইবি’র ঋণ সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ২২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ১৪৪ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ২৪২ কিলোমিটার ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন; দুইটি ৪০০ কেভি উপকেন্দ্র, তিনটি ২৩০ কেভি উপকেন্দ্র ও ১০টি ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ; এবং ২০টি ১৩২ কেভি বে-সম্প্রসারণ।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান সঞ্চালন অবকাঠামো ব্যবস্থার ক্ষমতা বাড়বে ও শক্তিশালী হবে। এর মাধ্যমে ঢাকার ডেসকো এলাকা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।