পরিবহনে নৈরাজ্য: চট্টগ্রামে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ
২০ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রামে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীতে অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন চলাচলেও বাধার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধর্মঘটের কারণে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন নিমতলাসহ আশপাশের এলাকায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। নগরীতে মাঝে মাঝে দুয়েকটি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দেখা গেলেও বন্দর অভিমুখী পণ্য বহনকারী কোনো যান দেখা যাচ্ছে না। তবে বেসরকারি কনটেইনারডিপোগুলোতে কিছু কিছু লং ভেহিক্যাল ঢুকেছে বলে জানা গেছে।
কনটেইনার বহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকী জানিয়েছেন, যেসব প্রাইম মুভার রাতে কনটেইনার পরিবহনের জন্য বন্দরে ঢুকেছিল, সেগুলো সকালের মধ্যে কনটেইনার নিয়ে বের হয়েছে। সকাল থেকে আর কোনো প্রাইম মুভার বন্দরে এবং অফডকে যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দরের জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস অব্যাহত আছে। তবে ইয়ার্ডে কনটেইনার থেকে পণ্য নেওয়ার জন্য সকাল থেকে কোনো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করেনি। এতে কার্যত বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরে কনটেইনার জট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দরের কার্যক্রমে কোনো সমস্যা নেই। জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা চলছে। সমস্যা হচ্ছে, খালাস কনটেইনার বা পণ্য বন্দরের বাইরে যাচ্ছে না। ডেলিভারির জন্য এভাবে কনটেইনার পড়ে থাকলে বন্দরে সংকট সৃষ্টি হবে। বন্দরের কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার। অলরেডি ৩৫ হাজার কনটেইনার জেটিসংলগ্ন ইয়ার্ডে আছে। ২-৩ দিন ডেলিভারি বন্ধ থাকলে ইয়ার্ডে বড়ো ধরনের জট তৈরি হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি ছাড়াও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে রফতানি কনটেইনারও যাচ্ছে না। সকাল থেকে ডিপোগুলোতে হাতেগোনা কিছু লং ভেহিক্যাল প্রবেশ করেছে। তবে বেলা গড়াতেই সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি ও রফতানি কনটেইনার প্রবেশ বন্ধ থাকলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। রফতানি পণ্য ছাড়াই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগে বাধ্য হলে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। শিল্প-কারখানায় কাঁচামালের সংকট তৈরি হবে।
এদিকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি পূর্বঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি মহাসড়কে নগরীর আশপাশের উপজেলায় যাতায়াতাকারী গণপরিবহনও সকালে চলাচল করেনি।
বুধবার সকালে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথ অলঙ্কার মোড়, অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতু এলাকায় ধত, শত মানুষকে গণপরিবহনের অপেক্ষায় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা অভিমুখে কোনো বাস সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি।
চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাস চালাতে পারছি না। সকালে আমরা বাস বের করেছিলাম। কিন্তু ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের শ্রমিকদের বাধার কারণে বাস চলতে পারছে না।’
নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট চলছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলীসহ পরিষদের তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক। বুধবার (২০ নভেম্বর) আবার বৈঠকে বসবেন তারা। এমন অবস্থায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সারাদেশে চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) ঢাকায় বিকেলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকেও আইন কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।