হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে দেশজুড়ে ভোগান্তি
২০ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৪২
নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের জের ধরে রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে দেশজুড়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
বুধবার (২০ নভেম্বর) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সারাবাংলার প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন মানুষের ভোগান্তির খবর।
বগুড়া:
সকালে হঠাৎ করেই বগুড়ায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। বগুড়া টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা ও জেলা পর্যায়ের কোন বাস, মিনিবাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়া ঢাকাগামী কোন কোচও বগুড়া ছেড়ে যায়নি। বিভিন্ন বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কাউন্টারগুলো বলছে, সকালে বগুড়া থেকে বাস ছেড়ে গেলেও সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ট্রাক শ্রমিকরা সেগুলো আটকে দেওয়ার কারণে এরপর আর কোনো বাস চলতে পারেনি। তবে বিআরটিসির সব বাস চলছে।
অন্যদিকে নয় দফা দাবিতে সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকার কারণে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে করে কাঁচা সবজি ঢাকাসহ অন্য জেলায় যেতে পারছে না।
বগুড়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি কামরুল মোর্শেদ আপেল জানান, শ্রমিক ইউনিয়ন কোন ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। চালকরা নিজেই বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দূরপাল্লার কিছু কিছু বাস চলাচল করছে।
কুমিল্লা
নগরীর শাসনগাছা, চকবাজার ও জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে বৃহস্পতিবার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এসব টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকরা যানবাহন চালানো বন্ধ রেখে সড়কে অবস্থান নেয়। এদিকে যানবাহন ছেড়ে না যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। শতশত যাত্রী এসময় যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
দিনাজপুর
দেশব্যাপী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে উত্তরের সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে। দিনাজপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছেনা কোন পণ্যবাহী ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যান। জেলার বাইরে থেকে কোন ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যান দিনাজপুরেও প্রবেশ করছেনা।
তবে, হিলিস্থল বন্দরে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্য খালাস ও ওঠানামাও চলছে।
গাইবান্ধা
শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে গাইবান্ধায় সীমিত ভাবে বাস চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে ট্রাক ও ট্যাংকলরি। তবে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতারা বলছেন এখানে আনুষ্ঠানিক কোন ধর্মঘট চলছে না। শ্রমিকরা নিজেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে গাড়ী না চালানোর কারণে তুলনামূলক ভাবে সড়কে কম গাড়ী চলছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব যানবাহন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ পথেও প্রায় সব ধরনের যানচলাচল। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ব্যাটারি চালিত ছোট যানগুলো ব্যবহার করছেন।
বুধবার দুপুরে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে এনা পরিবহনের চালক সাইফুলের জানান, ‘যে জরিমানা করা অইছে তা মেনে গাড়ী চালনো সম্ভব না। চালকরা ত ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা করে ঘটায় না। তাইলে এত শাস্তির ব্যবস্থা কেন? না খেয়ে মরে গেলেও আইন আগের মত না করলে বাস চালানো সম্ভব না।’ এসময় তার পাশে বসে থাকা শ্রমিকরাও তার কথার সায় জানান।
শাহীন নামে আরেক চালক বলেন, ‘সরকার যদি আমগরে লইয়া না ভাবে তাইলে ত অইব না। আমগর দাবি না মানলে গাড়ির চাকা চলতো না।’
পরিবহন চালকদের এমন হুটহাট সিদ্ধান্তে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা। আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু হলেই তারা ধর্মঘট করে বসে। আর আমরা যেন তাদের কাছে পুরাপুরি জিম্মি। সরকার কখনো তাদের বিষয়ে কঠোর হয়নি বলেই এভাবে আমাদের কিছুদিন পরপরই ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকারকে এদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
এদিকে অভ্যন্তরীণ বাস চলাচলও বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের। বাস না পেয়ে সিএনজি ও অটোরিকশায় করে যেতে হচ্ছে তাদের। আর এ সুযোগে তিন থেকে চারগুন বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা।
ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশালগামী লালু মিয়া বলেন, ‘সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অটো দিয়ে ভেঙে ভেঙে ত্রিশাল যাব। এখন অটো চালকরাও ভাড়া দ্বিগুণ করেছে। ১০ টাকা ভাড়ার মধ্যে আমাদের গুণতে হচ্ছে ২০ টাকা। সময়ও লাগছে বেশি।’
সৌখিন বাসের চালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে পারব না তাই গাড়ি চালাব না। যতদিন পর্যন্ত আইন সংশোধন না হবে ততোদিন পর্যন্ত গাড়ির চাকা ঘুরবে না।’
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে ভোর থেকে অভ্যন্তরীণ সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই সকাল থেকে কোনো বাস শহর ছেড়ে যায়নি। এতে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটাসহ জেলার সকল রুটের যাত্রীদের ভোগান্তী চরমে পৌঁছেছে। এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকসহ অভ্যন্তরীণ সকল রুটে চলাচলরত সাধারণ মানুষ।