সুদমুক্ত ঋণের গাড়ি: নীতিমালা ভাঙছেন কর্মকর্তারা, কঠোর জনপ্রশাসন
২০ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৩৫
ঢাকা: সরকারের দেওয়া সুদমুক্ত ঋণের সুবিধায় কেনা সরকারি গাড়ির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। নীতিমালা ভেঙে প্রতি মাসে মেইনটেন্যান্স বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে তুলে নিচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি টাকায় কেনা এসব গাড়ির ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি বন্ধে গত ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহন ব্যবহারের নীতিমালা অনুসরণ করছেন না যেসব কর্মকর্তা, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তাতের বিশেষভাবে সতর্ক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। গত ১৮ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে চিঠি পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি আমরা। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি সভায় কর্মকর্তাদের এই গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানতে সতর্ক করছি। ফলে এরই মধ্যে কোনো কোনো কর্মকর্তা নিয়ম মেনে ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে গাড়ি মেইনটেন্যান্স ও চালকদের জন্য ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন শুরু করেছেন। এসব কর্মকর্তা আগে ৫০ হাজার টাকাই তুলতেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় ‘সুদমুক্ত ঋণ’ গ্রহণকারী কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে বা মাঠ প্রশাসন বা প্রকল্পে কর্মরত। এজন্য তাদের সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নীতি-১৬ যথাযথভাবে অনুসরণ না করে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। এক্ষেত্রে তাদের ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এতে সরকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, খেয়াল করা যাচ্ছে, কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহন ব্যবহারে বিভিন্ন অনিয়ম করছেন, যা সরকারি কর্মচারীর অসদাচরণ ও দুর্নীতির আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত নীতিমালার ১০ ও ১৬ নম্বর নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
ওই নীতিমালায় বলা আছে, শতভাগ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি বা অধীন দফতর বা সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রেষণে, মাঠ প্রশাসন বা প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণে কেনা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ নির্ধারিত অর্থের ৫০ শতাংশ প্রাপ্য হবেন। এছাড়া কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত সুবিধায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি বা অধীন দফতর বা সংস্থার গাড়ি ব্যবহার বিধিসম্মত নয়।
সূত্র জানায়, সহকারী সচিব ও যুগ্ম প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারের সুদমুক্ত ঋণের এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এ বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জারি করা বাংলাদেশ গেজেটে বলা হয়েছে, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০১৭ (সংশোধিত)-এর নীতি ১০ (১)-এ গাড়ি মেরামত/সংরক্ষণ, জ্বালানি, ড্রাইভারের বেতন ইত্যাদি খরচ বাবদ মাসিক ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলো। ওই নীতিমালার ১৬ ধারায় প্রেষণ, মাঠ প্রশাসন বা প্রকল্পে কর্মরত প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকলে নিজ গাড়ি সচল রাখার প্রয়োজনে গাড়ি মেরামত, সংরক্ষণ, জ্বালানি ও ড্রাইভারের বেতন বাবদ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের শতকরা ৫০ শতাংশ হারে অর্থ প্রাপ্য হবেন। এতে অর্থ বিভাগের সম্মতি রয়েছে।
এর আগে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে একবার চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তারও আগে একই বছরের ৩০ আগস্ট এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর কয়েকদিন আগে ১২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধার অপব্যবহার ও সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধানের অভিযোগ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।