পরিবহন ধর্মঘটের উত্তাপ কাঁচাবাজারে, দাম বাড়ার শঙ্কা
২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৪
ঢাকা: নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে মঙ্গলবার অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। যার প্রভাব বুধবারই (২০ নভেম্বর) পড়েছে রাজধানী কাঁচাবাজারগুলোতে। এমনিতেই বাড়তি ছিল সবজির দাম, তারওপর ধর্মঘটের কারণ দেখিয়ে তা বেড়েছে আরও বেশি।
বুধবার সারাদিনের ধর্মঘটে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় সবজিসহ বেশিরভাগ কাঁচামালবাহী পরিবহন রাজধানীতে ঢুকতে পারেনি। যার কারণে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কাঁচাবাজারে ব্যাপক দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।।
বুধবার দিবাগত রাত ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার ঘুরে তেমনটাই দেখা গেল।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে পরিবহন শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে বুধবার সকাল থেকে কাঁচাবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যেটি বৃহস্পতিবারও বজায় থাকবে বলেই ধারণা বাজার সংশ্লিষ্টদের।
অবরোধের কারণে অনেকটাই নিরব ছিল রাতের চঞ্চল কারওয়ান বাজার। হাতে গোনা কয়েকটি পাইকারি পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে। ফলে নেই স্বাভাবিক ব্যস্ততা। চাহিদার তুলনায় মজুদ কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে বাজার দরে। যার মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।
ধর্মঘটে গাড়ি না আসায় বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকে অনেক কম গাড়ি ঢুকেছে বাজারে। তাই গাড়ির পণ্য যেখানে ১০ হাজার দিয়ে কিনতে পারতাম তা আমাদের এখন প্রায় ৩০ হাজারে কিনতে হচ্ছে। যার ফলে বৃহস্পতিবার পণ্যের দাম একটু বেশি করে বিক্রি করতে হবে। লাউ কেজি প্রতি ৫ টাকা বেশি হতে পারে। ফুলকপি ১০ টাকা। ধর্মঘটের কারণেই এমনটা হয়েছে।‘
কারওয়ান বাজারে প্রায় ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করা পাইকারি বিক্রেতা আলাউদ্দীনের মুখেও একই কথা, ‘ট্রেড লাইসেন্সের বয়স ৩৫ বছর হতে চলেছে। আজকেই এতো খালি দেখছি কারওয়ান বাজার। অথচ আমাদের বিভিন্ন জেলায় চাষীদের বলা ছিল সবজি পাঠাতে। এখন সেগুলো সেগুলো পচে যাবে। যে গাড়ি আসবে সেগুলোর ভাড়া ২৫ হাজারের বেশি দিতে হবে। আবার দোকানের কর্মচারি ও বিদ্যুৎ বেতন। সব মিলিয়ে কাঁচামালের চাহিদা অনুযায়ী একেবারেই কম। দাম বাড়বে।’
হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকার কারণে চাষীদের সঙ্গে সবজি পাঠানোর যে চুক্তি থাকে সেটাও ব্যহত হচ্ছে বলে জানালেন আলাউদ্দীন, ‘গতকালকেও ভিড়ভাট্টা ছিল। আজকে দুই আনিও নাই। বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড় থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও রংপুর থেকে করলা, মূলা, ধনে পাতার আসার কথা ছিল। সবই পঁচে যাবে। ধর্মঘট আগে থেকে জানা গেলে আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে মাল আনতে পারতাম। এখন ট্রেনে এতো মানুষের ভিড়ে বগি ফাঁকা পাওয়া যায় না।’
অন্যদিকে ‘অতি লাভের আশায়’ কেউ কেউ গতকালকের সবজি মজুদ করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেল। ধর্মঘটের কারণে চড়া মূল্যে সবজি বিক্রি করা যাবে বলে কেউ কেউ সেই মজুত করা কাঁচামাল নিয়ে বসেছে। কেউ কেউ আগের দিনের সবজি নিয়েই বসেছেন। সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করা হবে বলে জানালেন পাইকারি বিক্রেতা রবিউল। তিনি বলেন, ‘গাড়ি নাই। তাই বাসি সবজি নিয়ে আছি। এই বাঁধাকপিও বিক্রি হবে প্রতি পিসে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশিতে।’