সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রাজধানীবাসী
২১ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৪
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশের মধ্যে বসবাস করায় ঢাকা শহরের বাসিন্দারা শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ধূমপান পরিহার ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টায় বিএসএমএমইউ’র বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব সিওপিডি দিবস ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এ কথা বলেন। এবারের বিশ্ব সিওপিডি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘সম্মিলিত প্রয়াস, সিওপিডি বিনাশ’।
উপাচার্য বলেন, ‘বায়ু দূষণসহ সব ধরনের দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। খুব দ্রুত ঢাকা শহরের বায়ুসহ পরিবেশ দুষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। বায়ু দূষণযুক্ত পরিবেশের মধ্যে বসবাস করায় ঢাকাবাসী সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখনই অধিকমাত্রায় সচেতন হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধুমপান পরিহার ও দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের ব্রেন, হার্ট, লিভারের মতোই ফুসফুসও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ ফুসফুসের রোগ সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে ধুমপান পরিহার করতে হবে ও তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘সিওপিডি রোগ প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই বায়ু দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেন বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের মধ্যে সিওপিডি রোগ অন্যতম। তবে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান পরিহার, তামাক সেবন না করা ও ধোঁয়া থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সিওপিডি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগ প্রতিরোধে গ্রামেগঞ্জে পরিবেশবান্ধব চুলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও সিওপিডি রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ধূপমান নিরাময় কেন্দ্র, এনসিডি (নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস) কর্নার, পালমানারি রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার (ফুসফুসের রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র), রেসপিরেটরি আইসিইউ, রেসপিরেটরি ইমার্জেন্সি প্রতিষ্ঠা জরুরি। বর্তমান বিশ্বে সিওপিডি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮ ভাগ। বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ১০ ভাগ। যারা ধূমপান করে তাদের মধ্যে এ সংখ্যা ১২ ভাগ। আর অধূমপায়ীদের মধ্যে এ সংখ্যা ৩ ভাগ।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডি ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এটা ফুসফুসের একটা অসুখ যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সিওপিডি-র ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে শব্দসহ নানা উপসর্গ থাকে। ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাদের এটা হয়, তাদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোয়া ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যেও এই রোগটি দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ২০০২ সাল থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিবসটি প্রতিপালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সিওপিডি (COPD) রোগীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন। পরিসংখ্যান মতে, ২০০৫ সালে তিন মিলিয়ন লোক এ রোগে মারা গেছেন। ২০০২ সালে সেখানে সিওপিডি রোগ মৃত্যুর ৫ম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, নিকট ভবিষ্যতে তা ৩য় মৃত্যুর কারণ হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে বক্ষব্যাধি বিভাগ, বিএসএমএমইউ কর্তৃক পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ ভাগ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১১ দশমিক ৭ ভাগ পুরুষ এবং ১০ দশমিক ৬ ভাগ মহিলা।
তিনি বলেন, ‘সিওপিডি রোগ প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সিগারেট ও তামাক কোম্পানিগুলো বন্ধ হলে হ্রাস পাবে সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও অনেকটাই কমে আসবে। কারণ ধূমপান ও তামাজাত দ্রব্য সেবনের কারণে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও ধূমপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বর্তমানে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটাও প্রতিরোধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তামাক মুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে সিওপিডি দিবস উপলক্ষে এ ও বি ব্লকের মধ্যবর্তীস্থল বটতলা থেকে একটি জনসচেতনতামূলক র্যালি বের হয়। র্যালিতে বিএসএমএমইউ’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক, বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেনসহ উক্ত বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন।