Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উৎপত্তি থেকে মোহনা, পদ্মা বয়ে নিয়ে যায় ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক


২১ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৬

ঢাকা: প্লাস্টিক এখন সারাবিশ্বেই আলোচনার কেন্দ্রে। পানি, পাহাড় বা সমতল— কোথাও থেকেই প্লাস্টিক বিতাড়িত করা যাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে প্লাস্টিকের প্রকোপ আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। স্রেফ পদ্মা নদীতেই মিলেছে পরিবেশ দূষণকারী ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী।

সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি গবেষণা দল বিস্তারিত জরিপ শেষে এমন তথ্যই জানাচ্ছে। তারা বলছে, প্রতি বছর ৯০ লাখ টন প্লাস্টিক সামগ্রী নদীপথ ধরে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। গবেষণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছে, পরিবেশ দূষণকারী ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক উপাদান সমুদ্রে যাচ্ছে। কোমল পানীয়ের বোতল, কসমেটিকসের মোড়ক,  প্লাস্টিকের থালা, জগ— কিছুই বাদ পড়েনি এই তালিকা থেকে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার নাম দেওয়া হয়েছে— ‘সি টু সোর্স: দ্য গেঞ্জেস’। সাগর থেকে উৎসমূলের দিকে যাওয়া এই গবেষণার দ্বিতীয় ধাপ গত অক্টোবরের শেষভাগে শুরু হয়েছে, চলবে ডিসেম্বরের শেষাবধি। তবে এর প্রথম ভাগটি সম্পন্ন হয় গত মে থেকে জুলাই— এই তিন মাস ধরে। সে সময়ে বর্ষার ভরা মৌসুমে পদ্মা নদী ও তার আশপাশে জরিপ চালানো হয়। এখন শুকনো মৌসুমে অবস্থাটি কী দাঁড়িয়েছে, তা দেখার চেষ্টা করছেন গবেষক দল।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দুই ফেলো জেনা জ্যামবেক ও হিদার কোল্ডেওয়ে এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গবেষণার আরেকটি দিক হচ্ছে এর সঙ্গে সংযুক্তরা সবাই নারী। পদ্মা নদী ও নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বসতিগুলোতে বর্ষা মৌসুম পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কেমন হয়, তা ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখবেন তারা। এই সময়ে তারা নদীর তীরের মানুষদের সাক্ষাৎকার নেবেন, সমাধানের লক্ষ্যে কর্মশালা পরিচালনা করবেন। এছাড়াও মাঠ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অংশীদারদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। গবেষণার অন্যতম পার্টনারদের মধ্যে রয়েছে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াইল্ড টিম ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশন। গবেষণার সময় তারা প্লাস্টিক সামগ্রী কিভাবে তার উৎস থেকে সমুদ্রে ভেসে যায়, তা পর্যবেক্ষক ও নথিভুক্ত করবেন।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে— এ ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী যেন নদীপথে সমুদ্রে গিয়ে না পড়তে পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী করে তোলা।

এর আগে, গবেষণার প্রথম ধাপে গবেষকরা অন্তত বিভিন্ন জনপদে অন্তত ৯টি কর্মশালা আয়োজন করেন। এসময় তারা ২৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন, প্লাস্টিক সামগ্রী সম্পর্কে তাদের মনোভাব কী। এই সময়েই তারা পরিবেশ দূষণকারী অন্তত ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রীর সন্ধান পান। এছাড়া মেরিন ডেবরিজ ট্র্যাকার অ্যাপ ব্যবহার করে অন্তত ৫৬ হাজারটি প্ল্যাস্টিক সামগ্রী চিহ্নিত করেন। এছাড়াও দলটি স্থল ও পানিতে ৩ হাজার কাঠের পচনশীল ‘ড্রিফট কার্ড’ এবং ১০টি ‘বোতল ট্যাগ’ ব্যবহার করে প্লাস্টিক বর্জ্যের গতিবিধির ওপর নজর রাখে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফেলো ও গবেষক দলের উপনেতা হিদার কোল্ডেওয়ে বলেন, ‘সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। প্রতিবছর ৯০ লাখ টন প্লাস্টিক নদীতে গিয়ে পড়ে। এরপর ভেসে ভেসে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। আমাদের এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো— জনগণ ও প্লাস্টিক কীভাবে পদ্মা নদী ও সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত তা বোঝা এবং আমাদের তথ্য ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরি এবং এর সমাধানের পথ বের করা।’

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি বৈশ্বিক গবেষণামূলক সংস্থা। ১৮৮৮ সাল থেকে সংস্থাটি ভৌগলিক নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করে আসছে। বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক নানা বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে এই সংগঠন।

পদ্মা নদী পরিবেশ দুষণ প্লাস্টিক বায়ু দূষণ সমুদ্র দূষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর