Monday 28 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানিকগঞ্জে তেরশ্রী গণহত্যা দিবস আজ


২২ নভেম্বর ২০১৯ ০৯:৪৯ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:৩৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানিকগঞ্জ: আজ ২২ নভেম্বর, মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেরশ্রী এস্টেটের তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, কলেজ অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

ওই সময় তারা পুরো গ্রামের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন এলাকাবাসী। একইসঙ্গে শহীদ পরিবারগুলো স্বাধীনতার চার দশক পরও কোনো সরকারী স্বীকৃতি না পাওয়ার কষ্ট তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এসব পরিবারের সদস্যরা পার করছেন মানবেতর জীবন।

বিজ্ঞাপন

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে তেরশ্রী গণহত্যা দিবস পালন করা হচ্ছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, স্কুল- কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষজন এতে অংশ নিচ্ছেন।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর, শীতের কাকডাকা ভোরে রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় পুরো গ্রামটি ঘিরে ফেলে হানাদার বাহিনী। ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তারা। প্রথমে তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর তেরশ্রী এস্টেটের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে পাকসেনারা। জমিদারকে হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি, পর্যায়ক্রমে হত্যা করা হয় ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে। শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি, পুরো গ্রামের বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয় তারা।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হয়েছে প্রায় চার যুগ কিন্তু কেউ খরব রাখেনি কেমন আছেন ৪৩ জন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সরজমিন তেরশ্রী গ্রামে গিয়ে জানা গেলো, শহীদ পরিবারের সদস্যদের একবুক কষ্টের কথা। কথা হয়েছে শহীদ যগেস চন্দ্রের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সাংবাদিকরা বাড়িতে প্রবেশ করলেও প্রথমে ক্ষোভে পরিবারের কেউ কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। তাদের ক্ষোভের কারণ, সাংবাদিকরা খবরের তাগিদে প্রতি বছর খোঁজ-খবর নিলেও আর কেউ পা রাখে না তাদের বাড়িতে।

পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহত মাধবচন্দ্র দত্তের ছেলে মধুসূদন দত্তের সঙ্গে কথা হয়। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন সেই ভয়াল দিনের কিছু কথা। তিনি বলেন, মা ছিলেন গর্ভবতী। আমরা তিন ভাই-বোনের সংসার। হঠাৎ পাকবাহীনিরা আমাদের গ্রামে আসে। আমার বাবা তখন বাড়ি থেকে বের হলে সেনারা আমার বাবাকে ধরে নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এরপর বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বুকটা ঝাঁঝরা করে বাবাকে হত্যা করে। ওইসময় আমরা ভাই বোন সবাই খুব ছোট। মা গর্ভাবস্থায় শত কষ্ট সহ্য করেও আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চেষ্টা করতেন। যুদ্ধের পর টানা ১০টি বছর আমরা দুই বেলা খেতে পারিনি। কীভাবে যে কেটেছে সেই দিনগুলি তা বলার ভাষা নেই।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, কষ্ট একটাই, বাবা জীবন দিলেন কিন্ত স্বাধীনতার আজ কত বছর পেরিয়ে গেল, কেউ কোনো দিন আমাদের দিকে কোনো সহযোগিতার হাত বাড়লো না। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো দুরের কথা এক মুঠো চালও কেউ আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখেনি। এ কথা কাকে বলবো, কাকে শোনালে শহীদ পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবেন। বড় কষ্ট হয়, তাই কারো কাছে কিছুই বলতে মন চায় না।

এসময় তার ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী বিশ্না দত্ত জানান, আমার দাদা শহীদ হয়েছেন দেশের জন্য। কিন্ত সেই বংশের সন্তান হয়ে আমরা অবহেলিত। স্কুলে লেখাপড়া করতে কোনো সহায়তা পাইনা। এসএসসি পরীক্ষা দেব,ফরম ফিলাপের একটি টাকাও কম নেওয়া হয়নি আমাদের কাছ থেকে। আমার প্রশ্ন, তাহলে কিসের জন্য আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান হয়েছি?

স্কুল শিক্ষক সোমেশ্বর রায় চৌধুরী বলেন, তেরশ্রী এস্টেটের তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী আমার বাবা। সেদিন আমার বাবাকে ধরে নিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে পাকহানাদার বাহীনিরা জীবন্ত হত্যা করেছে। আমার মা শীতের মধ্যে পুকুরের কচুরি পানার পানিতে কোনো রকম নাক মুখ বের নিজেকে রক্ষা করেছিলেন। আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অন্য গ্রামে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ভাবে আমরা শহীদ পরিবারগুলো কোন স্বীকৃতি পাইনি। আমার সন্তানরা আমাকে প্রশ্ন করে আমার দাদু শহীদ হয়েছে সেই স্বীকৃতিটা কোথায় ?

ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ২২ নভেম্বর ভোর রাতে প্রায় ৩০০ পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদেশীয় রাজাকার আলবদররা মিলে তেরশ্রী গ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করা হয় নিরীহ ৪৩ জন মানুষকে। শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তেরশ্রী কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার পাশে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এখানকার মানুষের দাবি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি জাদুঘর ও পাঠাগারের।

২২ নভেম্বর ঘিওর উপজেলা তেরশ্রী গণহত্যা দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর