পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পে একধাপ এগোল চট্টগ্রাম ওয়াসা
২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম ধাপ হিসেবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ওয়াসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এসময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার। বাকি তিনটি বাংলাদেশি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-এরিনকো এসডিএন বিএইচডি মালয়েশিয়া, বিইটিএস কনসালটিং সার্ভিস লিমিটেড বাংলাদেশ, ডেভকনসালটেন্ট লিমিটেড বাংলাদেশ ও ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং বাংলাদেশ। চার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এরিনকো এসডিএন বিএইচডি মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান দাতুক আইআর আহমেদ জায়েদ লিদিন চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সময়মত ও সঠিকভাবে কাজটি শেষ হওয়ার আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত আমরা কর্ণফুলী নদীসহ পরিবেশকে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবো। এটি ছাড়াও আরও পাঁচটা প্রকল্প (পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের বাকি পাঁচটি পর্যায়) নিতে হবে। প্রতিটা প্রকল্পে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা খরচ। আমরা কাজ করছি ফান্ড যোগাড়ের জন্য। বিশ্বব্যাংকসহ ডেভেলপমেন্ট পার্টনাররা অর্থায়ন করতে চাইছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্জ্য এত বেশি যে নদীগুলো নিরাপদ না। বাংলাদেশে এমনকি ঢাকা শহরও স্যুয়ারেজ সিস্টেমের বাইরে ছিল। শিল্প ও গৃহস্থালি সব বর্জ্য যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। তাতে করে ঢাকার নদী দূষণ বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকায়ও স্যুয়ারেজ নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের এই প্রকল্পের সব টাকা সরকার অনুদান হিসেবে দিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম নগরীতে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় সেফটি ট্যাংক ও ল্যাট্রিনের সব বর্জ্য ড্রেন ও খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। ভয়াবহ দূষণ রোধে ২০১৩ সালে প্রণিত মাস্টারপ্ল্যানে পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার এবং দুটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর গ্রহণ করা হয় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প’।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৩৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পয়ঃশোধনাগার, একটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়ঃপাইপ লাইন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন এবং ৭২ হাজার ৫০২টি বাড়ির সংযোগ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩৭৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেবে সরকার। বাকি ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
নগরীর হালিশহর এলাকায় প্রায় ১৬৫ একর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ের অধীনে নগরীর প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। এলাকাগুলো হচ্ছে-উত্তর হালিশহর, নয়াবাজার, রামপুর, পাহাড়তলি, আমবাগান, লালখান বাজার, আসকার দিঘীর পাড়, কোতোয়ালী, ফিরিঙ্গিবাজার, সদরঘাট, দক্ষিণ আগ্রাবাদ ও সল্টগোলা ক্রসিং।
প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য এবং ৩০০ ঘনমিটার ফিকাল স্লাজ পরিশোধন সম্ভব হবে। আর ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরীর মোট পয়ঃবর্জে্যর ১৯ ভাগ এবং ফিকাল স্লাজের ৪১ ভাগ পরিশোধ সম্ভব হবে বলে বক্তব্যে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা চূড়ান্ত করলে ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা মেনে নেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘পানির জন্য ওয়াসা যখন খোঁড়াখুঁড়ি করে, তখন নগরবাসীর দুর্ভোগ হয়। আমি ওয়াসার পাশে ছিলাম। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য আবারও ভোগান্তি হবে। তবে নগরবাসীর স্বার্থেই আমি ওয়াসার পাশে থাকব।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলাম, ওয়াসার বোর্ড সদস্য শওকত হোসেন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এরিনকো এসডিএন বিএইচডি মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান দাতুক আইআর আহমেদ জায়েদ লিদিন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম