Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়কের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ঝুলে আছে ৫ বছর


২৩ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০০

ঢাকা: সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সড়কের হাজার হাজার একর ভূমির ইজারা ও ব্যবহার নিয়ে সাড়ে ৫ বছর ধরে একটি নীতিমালা ঝুলে রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ২০১৫ সালে খসড়া প্রস্তুত করা এ নীতিমালা এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ কারণে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অধীনে দেওয়া ভূমি থেকে কোনো রাজস্ব পায়নি সরকার। সড়ক পরিবহন ও  সেতুমন্ত্রী এ জন্য তার মন্ত্রণালয়ের ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা’কে দায়ী করেছেন। তিনি একাধিকবার তাগিদ দিলেও নীতিমালা অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গতি আসেনি।

অবশেষে চলতি নভেম্বর মাসে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫ (সংশোধিত)-এর খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত গ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর ছিল মতামত গ্রহণের শেষ দিন। এবার  শিগগিরই নীতিমালাটি অনুমোদনে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

এ নীতিমালার আলোকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রাস্তার পাশে থাকা ভূমি ব্যবহারের অনুমতি, ভূমির উন্নয়ন, সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ থাকবে। এ নীতিমালার মধ্যে সড়কের পাশে ফিলিংস্টেশনগুলোকে জমি ইজারা দেওয়া হবে।

সারাদেশের সড়কের ভূমিতে ৭০০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং প্রায় এক হাজার একশ পেট্রোল পাম্প রয়েছে । নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকায় ৫ বছর ধরে তাদের ইজারা ফি বকেয়া পড়েছে। ফিলিং স্টেশন মালিকরা আগের নিয়মে ইজারা দিতে গেলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তা নেয়নি। নতুন ইজারা নীতিমালার আলোকে ইজারা নিলে একেকটি ফিলিং স্টেশন মালিককে বছরে কোটি টাকার বেশি ইজারা ফি দিতে হবে। যা দিতে অপারগ তারা এবং এটি অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছে ফিলিং স্টেশন মালিকদের সংগঠন।

এদিকে খসড়া নীতিমালার সঙ্গে সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের সংগঠন ও সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ভিন্নমত জানিয়েছে। এ নীতিমালার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে প্রতিবাদ জানিয়ে ফিলিং স্টেশন মালিকরা ধর্মঘট করেছিলেন।  দুই মাসের মধ্যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও এরপর ৫ বছর কেটে গেছে। নীতিমালার দায়িত্বে থাকা সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব যুগ্ম সচিবদেরও পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে আওযামী লীগ সরকারে দ্বিতীয় মেয়াদে করা এ নীতিমালা এবার তৃতীয় মেয়াদকালে অনুমোদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, নীতিমালাটি করার পর তাদের সংগঠন প্রতিবাদ জানায়। এরপর দুই মাসে তা সমাধানের কথা বলে সাড়ে সাড়ে ৫ বছর কাটিয়ে দেওয়া হয়।

এবার মন্ত্রণালয় আবার নীতিমালাটি অনুমোদনের মতামত চাইলে অ্যাসোসিয়েশন থেকে লিখিত আকারে তা জমা দেওয়া হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, নীতিমালার খসড়ায় ভূমির মৌজা মূল্যের আলোকে ইজারা নির্ধারণের বিরোধিতা করেছেন তারা। এক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত ফি চান তারা। যা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব।

খসড়ায় যে পরিমাণে ভূমির মৌজা মূল্যের আলোকে ইজারা দেওয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর।

এদিকে এই নীতিমালার মধ্যেই যোগ করা হয়েছে সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। এ কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে একাধারে পাঁচ বছর। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধনের অধীনে বৃক্ষরোপণ করে তা একটি কাঠামোতে আনতে ৪ থেকে ৫ বছর লাগে। এ অবস্থায় সৌন্দর্যবর্ধন কাজের মেয়াদ দশ বছর চায় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এ কাছের মেয়াদ নবায়নযোগ্য চান সংশ্লিষ্টরা।

এই নীতিমালার আলোকে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক সৌন্দর্যবর্ধন কাজ চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নীতিমালা অনুমোদানের আগেই সড়কটি সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সূচনা করে তা ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সে কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি।

সওজ সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ফিনিশিং কাজ বাকি রাখা হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন কারী প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়াল্ড সড়কটির ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করেছে। নীতিমালা অনুমোদনের পরই প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হয়েছে।

বিমানবন্দর সড়ক সৌন্দর্যবর্ধন কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শেষ পর্যায়ে। সবুজে সড়কের দুই পাশ ঢেকে যাচ্ছে। বনানী বিমানবন্দর সড়কে সৌন্দর্য্ বর্ধন প্রকল্পের অধীনে ২৯০টি আধুনিক বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন হয়েছে। ২৯০ সেট ডিজিটাল এলইডি বৈদ্যুতিক বাতি, ৮শ’ সেট গার্ডেন লাইট, ১৫০টি গার্ডেন বেঞ্চ বসানো হয়েছে এবং ১২টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি বসানোর কাজ শেষের দিকে।

এছাড়া ১২টি আরএইচডি সার্ভিস পয়েন্ট নির্মাণ হচ্ছে যেখানে পাবলিক টয়লেট, এটিএম বুথ, ভেন্ডিং মেশিন, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, ফ্রি বিশুদ্ধ খাবার পানি, চার্জিং স্টেশন, মানি চেঞ্জার, পুলিশ বক্স, ইনফরমেশন বুথ, মিনি স্ক্যান কর্নার ও ক্যাশ ইন রিচার্জ পয়েন্ট থাকবে।

তিনি আরও জানান, ৬ কিলোমিটারের মধ্যে আরও বসানো হচ্ছে ১২০টি ডিজিটাল ডাস্টবিন, ১২টি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। সড়কের দুইপাশে ফুটিয়ে তোলা হবে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস। থাকবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ। পুরো সড়কপথ ঘিরে রাখবে ৩৫০টি সিসি টিভি ক্যামেরা। থাকবে ফ্রি ওয়াইফাইসহ কিডস প্লে জোন।

নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সড়কের সৌন্দর্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ গাছ লাগানো। এখানে বনসাইসহ দেশিয় শত শত প্রজাতির দশ লক্ষাধিক গাছ লাগনো হয়েছে। এ সব গাছের বেশিরভাগ প্রচাতি একটি নিধারিত কাঠামোতে আসতে ৪ থেকে ৫ বছর লাগবে। আর কাজের মেয়াদই যদি পাঁচবছর হয় তাহলে এখানে সৌন্দর্যায়ন হবে না। এজন্য অন্তত ১০ বছর রাখতে হবে। আর কাজের মান বিবেচনা করে এটি পুনরায় নবায়নযোগ্য করতে হবে।

এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব গোলাম জিলানী জানান, নীতিমালা নিয়ে চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন এটি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এরপর অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। যেসব স্টেকহোল্ডার মতামত দিয়েছেন তা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে সেগুলোও এখনও আসেনি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয় নিজেদের বৈঠকে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

সড়কের ভূমি সড়কের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর