Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ অস্ত্র যাচ্ছে জঙ্গি-ছিনতাইকারী-কিশোর গ্যাংয়ের কাছে


২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১১:০০

ঢাকা: আগে গ্রাহকের কাছে অবৈধ অস্ত্র পাঠাতে পরিবহনসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতেন অস্ত্র বিক্রেতারা। কখনও কুরিয়ার কিংবা পার্সেলের নামে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া হতো সংশ্লিষ্ট এলাকায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ায় কৌশল পাল্টেছে অস্ত্র কারবারিরা, এখন হাতে হাতে পৌঁছানো হচ্ছে অস্ত্র। আর এ সব অস্ত্র বিক্রেতাদের আখড়া কিংবা সীমান্ত হয়ে বাহক মারফতে চলে যাচ্ছে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, ডাকাত, বনদস্যু, রাজনৈতিক নেতা ও কিশোর গ্যাং গ্রুপের কাছে।

বিজ্ঞাপন

অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাবের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ বছরে সারাদেশ থেকে অন্তত পাঁচ শতাধিক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বেশি হওয়ায় এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অতীতের চেয়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। প্রায়ই এসব অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অস্ত্র ব্যবহারকারীদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। বিশেষ করে এসব অবৈধ অস্ত্র কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের হাতে পৌঁছালে বিপদের কারণ হতে পারে। একইভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর কাছে যেভাবে সহজেই অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে। এটিই দুশ্চিন্তার কারণ।

পুলিশ ও র‌্যাব থেকে জানা যায়, গত ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে ডিবি পুলিশ জব্দ করেছে চারটি ও র‌্যাব জব্দ করেছে ১৪টি অস্ত্র। আর ৫০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ডিবি পুলিশ জব্দ করেছে ১৭ রাউন্ড এবং র‌্যাব জব্দ করেছে ৩৩ রা্‌উন্ড।

গত ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন কোরিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকা থেকে ৭ দশমিক ৬৫ মডেলের একটি, দুটি রিভলবার, একটি  বড় একনলা বন্দুক ও ১৭ রাউন্ড গুলি জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ।

ডিবি জানায়, অস্ত্রগুলো ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে একজনের হাত বদলেই সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে যেত। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গত ১১ নভেম্বর ভোরবেলা রাজধানীর গাবতলী থেকে তিন অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। এ সময় একটি পিস্তল, একটি শ্যুটার গান ও এক হাজার ৭১ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি ট্রাক জব্দ করে র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

 ১০ নভেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাশুনিয়া বাজার এলাকা থেকে দুইটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি শ্যুটার গান, ১৪ রাউন্ড গুলি ও চারটি ম্যাগজিনসহ একজন শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫।

এর আগে, গত ৯ নভেম্বর সিলেট মহানগরীর শাহপরাণ থানার শিবগঞ্জ থেকে একনলা বন্দুকসহ একজন অস্ত্র বিক্রেতাকে গ্রেফতার কবরে র‌্যাব-৯।

৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্যাং স্টার গ্রুপের ৫ সদস্যকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এরা হলো কামরুল হাসান, সাদ্দাম হোসেন, আলমগীর হোসেন, জীবন মিয়া ও শ্রী লিটন চন্দ্র রায়।

গত ১ নভেম্বর নাটোরের কইবাড়ি কৃঞ্চপুর থেকে দুইটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি ম্যাগজিন, চার রাউন্ড গুলিসহ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ কমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যেন বেড়ে না যায় সে জন্য গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে সময় এসেছে বৈধ অস্ত্রের সঠিক হিসাব রাখার জন্য ডিজিটালাইজেশনের। যাতে কোথা থেকে অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে বের করা হয়।’

চলতি বছর ঢাকাসহ সারাদেশে কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে পুলিশ সদর দফতরে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মিডিয়া শাখার এআইজি সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ ব্যাপারে তথ্য দিতে পারেননি।

তবে র‌্যাব সদর দফতরে যোগাযোগ করা হলে মিডিয়া শাখার সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে র‌্যাব মোট ৪৪৬টি অস্ত্র জব্দ করেছে। বিপরীতে ৩৮১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া ১৭৫টি ম্যাগজিন, ২ হাজার ৯৮৯টি গোলাবারুদ, ৫৭টি ককটেল ও ২৬৬ টি বিস্ফোরক জব্দ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। নজরদারি না থাকলে তো এত অস্ত্র জব্দ করা সম্ভব হতো না।’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনের মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্য আত্মসমর্পণ করে ও তারা ৫২টি অস্ত্র এবং তিন হাজার ৯০৪ রাউন্ড গুলি জমা দেয়। এ ছাড়া মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর ২৫টি অস্ত্র, শান্ত ও আলম বাহিনীর ২০টি, খোকা বাবু বাহিনীর ২২টি, নোয়া বাহিনীর ২৫টি, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ৩১টি, ছোট রাজু বাহিনীর ২১টি, আলিফ ও কবিরাজ বাহিনীর ৩১টি, মানজু বাহিনীর ১৯টি, মজিদ বাহিনীর ১৪টি, বড় ভাই বাহিনীর ১৮টি, ভাই ভাই বাহিনীর ৮টি, সুমন বাহিনীর ১২টি, ডন বাহিনীর ১০টি, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর ৯টি, ছোট সুমন বাহিনীর ৯টি, দাদা ভাই বাহিনীর ১২টি, হান্নান বাহিনীর ৮টি, আমির আলী বাহিনীর ৫টি, সূর্য বাহিনীর ১১টি, ছোট সামসু বাহিনীর ১০টি ও মুন্না বাহিনীর ১২টি অস্ত্রসহ মোট ৪০৪টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র র‌্যাবের কাছে জমা দেওয়া হয়।

অবৈধ অস্ত্র কিশোর গ্যাং র‍্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর