ইতালির আমালফি যেন লেবুর স্বর্গরাজ
২৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:০৫
ইতালি: ইতালির পশ্চিমে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশের নাম আমালফি কোস্ট। ১৬টি পৌর এলাকা মিলে এই আমালফি কোস্ট। যার স্থানীয় নাম ‘কোস্তিয়েরা আমালফিতানা’। আমালফি উপকূলের অবস্থান সোরেন্টো ও সালেরনোর মধ্য নেপল উপসাগরের দক্ষিণে।
এই উপকূল বরাবর হাঁটলে এর অত্যাশ্চর্য দৃশ্য এবং লেবু গাছের সুবাস পর্যটকদের মুগ্ধ করে দেয়। এই উপকূলে প্রচুর পরিমাণে লেবু উৎপাদন হয়; যা সমগ্র এলাকার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। পর্যটনকেন্দ্রিক এখানকার দোকানগুলোও লেবুর বৈশিষ্ট্যযুক্ত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে।
এখানকার লেবুর বিশেষত্ব হলো- এর খোসায় উন্নতমানের তেল পাওয়া যায়। লেবু সম্পর্কে স্থানীয় অনেকেই মনে করেন, তাদের পূর্বপুরুষরা বুঝতেন লেবুর উপকারিতা কী ও কতটা। আগে তারা সব কিছুতে লেবু ব্যবহার করতেন। স্কার্ভি রোগ ও জ্বর সারাতে, কাপড় পরিষ্কার করতে এবং চুল ধুতে লেবুর ব্যবহার ছিল। আজও হাত কেটে গেলে তারা অ্যালকোহল না দিয়ে লেবুর রস দেন। কফিতে লেবুর খোসা দিলে মাথাব্যথা সারে। লেবু আসলে ওষুধ। লেবু হল সোনার মতো দামি।
দিগন্ত ও ভূমির মিলিত ঐন্দ্রজালিক দৃশ্য উপভোগ করতে এই উপকূলের চারপাশে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন। এই সমুদ্রের খাড়া ঢালে পা ডুবে যায়। এখানে সাঁতার কাটা আনন্দদায়ক নয়। কারণ সমুদ্রের মধ্যে বালির সংকীর্ণ অঞ্চল প্রসারিত হয়েছে। আরেকটি কারণ হলো- গ্রামের এই সৈকত ছোট এবং পাথুরে। এখানকার ঘর বাড়ির নম্বর প্লেটগুলিও লেবু দিয়ে সুসজ্জিত করা। নভেম্বরে এখানে লেবু তোলা হয়। তাই পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এই সময়টাই উপযুক্ত।
পর্যটন গন্তব্যের হই হুল্লোড় এবং ব্যস্ততা থেকে কেউ যদি দূরে থাকতে চায় তাহলে সঙ্গীতের শহর র্যা ভেলোর যেকোনো হোটেলে থাকতে পারেন। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এটি একটি অসাধারণ জায়গা। র্যা ভেলো পৌঁছতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পর্যটকরা এখানে বিদেশি খাদ্য ও অসাধারণ সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
বিনোদন ছাড়াও পর্যটকরা এই সৈকত থেকে নৌকা করে গ্রোতা ডি স্মেরালদো গুহা পরিদর্শনে যেতে পারেন। সূর্য রশ্মি পড়লে গুহার জলটি থেকে পান্নার রঙ প্রতিফলিত হয়।
আমালফির কাছাকাছি অন্যান্য আকর্ষণগুলো- ডায়োসেসান মিউজিয়াম, দুয়োমো -ক্যাতেড্রালে স্যান্টান্দ্রিয়া, মিউজিও আরসেনাল আমালফি, মিউজিও ডেলা কার্টা, এবং লা কারাভেলা আর্ট গ্যালারি।
আমালফির ইতিহাস নাকি খ্রিষ্টজন্মের চার শতাব্দী আগের। চাষের জমির অভাবে এখানকার মানুষেরা সমুদ্রযাত্রা আর ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন। নবম শতাব্দীতে আমালফি একটি স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।