Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার পরও অরিত্রীকে পরীক্ষায় দিতে দেয়নি’


২৫ নভেম্বর ২০১৯ ২২:০৩

ঢাকা: ‘স্কুল থেকে আমাকে, আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ (অরিত্রী) দেখা করতে বলা হয়। ওখানে যাওয়ার পর জানানো হয় তারা অরিত্রীকে টিসি দেবে। তখন পরিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে আমরা তিন জনে অনুরোধ করি, হাত জোড় করে ক্ষমা চাই। কিন্তু তার পরও পরীক্ষায় অংশগ্রণের সুযোগ দেয়নি। উল্টো অপমাণ করে রুম থেকে বের করে দেয়। মেয়ের সামনে বাবা-মার অপমান সহ্য করতে না পেরেই অরিত্রী অত্মহত্যা করে।’ আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন আত্মহত্যা করা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর বাবা দিলীপ অধিকারী।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার মামলায় ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলমের আদালতে সাক্ষ্য দেন দিলীপ অধিকারী।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ স্কুকে প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবন শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর আমাদের বাসার মোবাইল ফোনটি অরিত্রী ভুলবশত পরীক্ষা চলাকালীন সময় হাতে করে স্কুলে নিয়ে যায়। পরীক্ষা শেষের দিকে অরিত্রীর কাছে থেকে তার শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা মোবাইল ফোনটা নিয়ে নেয়। পরে অরিত্রী বাসায় এসে জানায় তার শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা পরদিন পরীক্ষার আগে আমাদের স্কুলে যেতে বলেছেন।’

দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী বিউটি অধিকারী, আমি ও অরিত্রী স্কুলে যায়। তিনজনকে অধ্যাক্ষের ওয়েটিং রুমে বসতে বলা হয়। এরপর ওই শাখার প্রধান জিন্নাত আক্তারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওনার রুমে ঢোকার সাথে সাথে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলে, আপনার মেয়েকে টিসি দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমার তিন জনেই অনুরোধ করি, ক্ষমা চায়। একবারের জন্য পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এরপর ওই অধ্যাক্ষ জানালেন, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, টিসি দেওয়া হবে। উনার কাছে পরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের রুমে যায়। আমরা আবার ক্ষমা চেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকি। তিনি আমার মেয়ের সামনে আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করে। এরপর রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে।’

‘ঘটনার কিছুক্ষণ পর অরিত্রীকে রুমে আর দেখতে পাইনি। অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে শান্তিনগর বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে অরিত্রীকে দেখতে পাই। আমরা অন্যজনের সাথে কথা বলার ফাঁকে হয়তো ওই সময় বাসায় চলে এসেছে। এরপর দুপুরে ব্যবসায়ের কাজের জন্য আমি বের হয়। দুপুর ২টার সময় আমার স্ত্রী বিউটি অধিকারী ফোন করে জানায়, অরিত্রীর রুম ভিতর থেকে আটকানো। অনেক ধাক্কাধাক্কি করে খুলছে না, কোনো সাড়া-শব্দও নেই। তখন অরিত্রীর মাকে বললাম বাসার কেয়ারটেকারকে কল দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে। তাকে ডেকে আনা হলে সেও দরজা খুলতে পারে না। পরে বাথরুমের ভেন্টিলেটরের মধ্য দিয়ে অরিত্রীর রুমে কেয়ারটেকারকে ঢোকানো হয়। ভেন্টিলেটরের ছোট ফাঁক দিয়ে ঢুকে অরিত্রীকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়,- দিলীপ অধিকারী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সীমা আক্তার দিলীপ অধিকারীকে জেরা শুরু করলে তা শেষ না হওয়ায় আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বাকি জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করেন।

এর আগে ১০ জুলাই একই আদালত ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তারের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে সাক্ষীগ্রহণের আদেশ দেন।

গত ২০ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন।

অন্য দুই শিক্ষিকা হলেন— ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিন্নাত আরা।

অরিত্রীর আত্মহত্যায় ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা দিলীপ অধিকারী। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষক। মোবাইল ফোনে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীর মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে শান্তিনগরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।

অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়।

সারাবাংলা/এআই/এমআই

অরিত্রী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্কুল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর