সেতু হচ্ছে বাঙ্গালী নদীর আড়িয়ারঘাটে
২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:৫৬
ঢাকা: বন্যার ঝুঁকি কমাতে ও যাতায়াত সহজ করতে বাঙ্গালী নদীর আড়িয়ারঘাটে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এই উদ্যোগের আওতায় একইসঙ্গে ওই এলাকার মহাসড়কও উন্নয়ন হবে। এজন্য ‘বগুড়া-সারিয়াকান্দি জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন এবং বাঙ্গালী নদীর ওপর আড়িয়ারঘাট সেতু নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নত হবে। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও নিরাপদ হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি একনেকের জন্য তৈরি করা তালিকায় রয়েছে। এটিসহ মোট ছয়টি প্রকল্প উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকার বাইরে সরাসরি টেবিলে কোনো প্রকল্প যাবে না। কেননা আমাদের হাতে সেরকম কোনো প্রকল্প নেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বগুড়া-সারিয়াকান্দি জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। সড়কটি বগুড়া শহরের চেলোপাড়া সেতু থেকে শুরু হয়ে বগুড়া দ্বিতীয় বাইপাসকে সংযুক্ত করে গাবতলী উপজেলা হয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলাতে শেষ হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি একটি নদীবন্দর। এ কারণে জামালপুর যমুনা সার কারখানা থেকে উৎপাদিত সারের বড় অংশ এই সড়কের মাধ্যমে বগুড়া হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে পরিবহন করা হয়। জামালপুর, কুড়িগ্রাম, শেরপুরের মানুষ সংক্ষিপ্ত পথে যমুনা নদী পার হয়ে এই সড়কের মাধ্যমে বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলাতে যাতায়াত করে।
সারিয়াকান্দি উত্তরবঙ্গের একটি অন্যতম বড় মৎস্য কেন্দ্র। যমুনা নদী থেকে প্রাপ্ত মাছ এই সড়কের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ করা হয়। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা বাংলাদেশের অন্যতম বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। প্রতিবছর সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বিস্তির্ণ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়। বন্যা কবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সরবরাহসহ বন্যার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বগুড়া-সারিয়াকান্দি জেলা মহাসড়কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া মোকামতলা-সোনাতলা-হরিখালী-হাটশেরপুর-সারিয়াকান্দি জেলা মহাসড়কের ১৯তম কিলোমিটারে বাঙ্গালী নদীর উপর আড়িয়াঘাট নামক স্থানে প্রায় ২৯৮ দশমিক ৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের বিদ্যমান বেইলী সেতুটি জরাজীর্ণ ও অপ্রশস্ত।
প্রস্তাবিত সড়কটির বহুমাত্রিক ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করে এই বেইলী সেতুর স্থানে একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণসহ সড়কটি ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে উন্নীত করা প্রয়োজন। এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর গত ২৪ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
পুনর্গঠিত ডিপিপিতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়েছে। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত মতে, ভূমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় প্রাক্কলন করায় পিইসি সভায় উপস্থাপিত ব্যয়ের তুলনায় মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩০ কোটি ৬ লাখ টাকা বেড়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বগুড়া জেলার সঙ্গে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও নিরাপদ হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ, সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণে মাটির কাজ, বিদ্যমান ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট মজবুতিকরণ, নতুন ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, সার্ফেসিং, রিজিড পেভমেন্ট এবং শাহবাজপুর আরসিসি সেতু নির্মাণ ও আড়িয়ারঘাট পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ।