ঢাকা: রাজধানীর সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটক থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এ সময় বিএনপির কর্মীরা সড়কে আটকে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের এই কর্মসূচি পরিকল্পিত। তারা ভাঙচুর চালানোর জন্য আগে থেকে ট্রাকে করে লাঠিসোটা নিয়ে আসেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে থেমে যায়। নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে একপর্যায়ে সেখানকার সড়কে বসে পড়েন। সড়কে দেওয়া হয় বেরিকেড। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুইঘণ্টা পর পুলিশ অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পুলিশের তাড়া খেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দৌড় দেওয়ার সময় আগেই নিয়ে আসা লাঠিসোটা হাতে নেন। এ সময় সড়কে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙ্চুর করে। এর মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি জিপ গাড়ি ও কয়েকটি প্রাইভেটকার রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করতেই আগে থেকেই লাঠিসোটা ট্রাকে ভরে নিয়ে এসে রেখেছিলেন। পরে তারা ওইসব লাঠি ব্যবহার করেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে কদম ফোয়ারা এলাকায় পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ১২টার পর বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে এসে সড়কে বসে পড়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদসহ বেশ কয়েকজনকে বোঝালেও তারা সড়ক ছেড়ে দিতে রাজি হননি। এরপর আরও এক ঘণ্টা অপেক্ষা করা হয়। আড়াই ঘণ্টা সড়ক ছেড়ে না দেওয়ায় পুলিশ তাদের বোঝাতে যান। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। যাওয়ার সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙচুর করার গাড়ির মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িও ছিল। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হবে। সেই মামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
অ্যাকশনের সিদ্ধান্তের সময় পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আজিমুল হক পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা কেউ নেতাকর্মীদের গায়ে হাত দেবেন না। শুধু একযোগে এগিয়ে যাবেন। নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। বেশি সমস্যা হলে গ্যাস মারবেন। ওনারা আগে থেকেই লাঠিসোটা এনে রেখেছেন সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন। গাড়ি ভাঙচুর চালাতে পারে, এ জন্য তাদের নিবৃত্ত করবেন। এরপরই পুলিশ হাইকোর্টের বাইরের গেটের সামনে থেকে অ্যাকশন নিতে নিতে প্রবেশমুখের দিকে এগিয়ে যায়।
পুলিশ অ্যাকশন নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলে নেতাকর্মীরা প্রথমে পিছু হটে। এরপর স্লোগান দিয়ে থেমে যায় এবং পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এরপরও পুলিশ তাদের ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে নেতাকর্মীদের একটি অংশ আগে থেকে নিয়ে আসা লাঠিসোটা (গাছের কাচা ডাল) হাতে নেয় এবং বাম পাশের সড়কে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশ পুলিশকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিচার্জ করে।
শাহবাগ থানা পুলিশের একজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেতাকর্মীদের যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্য না থাকত তাহলে আগেই কেন ট্রাকে ভরে গাছের ডাল নিয়ে এসে জড়ো করলেন? আবার পুলিশ যখন তাদের সরিয়ে দিতে গেল তখন সেই লাঠি কেন হাতে নিয়ে তারা সড়কে যানজটে পড়ে থাকা গাড়িগুলো ভাঙচুর করলেন? আসলে তারা একটি শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতেই এখানে জড়ো হয়েছিল বলে মনে করছি।’