আজ মঞ্চে অনুস্বর’র ‘অনুদ্ধারণীয়’
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৩০
শিল্পী কি সমাজ-বাস্তবতার বাইরে? অথবা সমাজ-বাস্তবতায় কি শিল্পের কোনো দায় নেই? এ প্রশ্নে, সেই পুরাতন বিতর্ক মনে উঁকি দেয়— শিল্পের জন্য শিল্প, নাকি মানুষের জন্য শিল্প? সমাজে শিল্পের ভূমিকা বা দায় প্রশ্নে শিল্পীর এ এক আদি সংকট। রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদিতে শিল্প বা শিল্পীর ভূমিকা কী? অথবা শিল্পীর পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখা উচিৎ কি না? রাজনৈতিক মীমাংসায় মানুষের পক্ষ নিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি তো কম নয়। তাতে শিল্পীর স্বাধীন সত্তা শুধু বাধাগ্রস্ত নয়, বিভ্রান্ত— এমনকি পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এমত দ্বন্দ্বে যুগে যুগে শিল্পীর স্খলন (?) বরং মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুদ্ধদেব গুহ’র ছোট গল্প ‘অনুদ্ধারণীয়’র মূল উপজীব্য এই দ্বান্দ্বিকতা। আর এই দ্বান্দ্বিকতাকে নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চে উপস্থাপন করেছে নাট্য দল ‘অনুস্বর’। চলতি বছরের জুলাই মাসে নাট্যাঙ্গনে পথচলা শুরু করে নতুন নাট্যদল ‘অনুস্বর’। তাদের প্রথম প্রযোজনা ‘অনুদ্ধারণীয়’। যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়ছিল গেল ২১ সেপ্টেম্বর, মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।
আলোচিত এই নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ বারী। ‘অনুদ্ধারণীয়’ প্রসঙ্গে তিনি তার অনুভূতি জানালেন এভাবে, “‘অনুদ্ধারণীয়’ গল্পের দ্বান্দ্বিকতাই আমাকে নাটক রচনায় উৎসাহিত করে। নাটক রচনাকালে কবি চরিত্রে স্খলিত শিল্পীর একটি স্পষ্ট চরিত্র দাঁড় করবার চেষ্টা করি। আমার মনে হতে থাকে অপঙ্কিল ও ঋজু তারুণ্যের মুখোমুখি এমত চরিত্র বুদ্ধদেব বসুর এই গল্পের কবির পরিণতিকে আরও যুক্তিযুক্ত ও ব্যাপ্ত করবে। কবিরও কিছু কথা থাকতে পারে, তাই নাটকে অধিবাস্তব কিছু চরিত্র ও দৃশ্যের অবতারণা করেছি। আদতে বুদ্ধদেব বসুর গল্পে থিতু থাকারই চেষ্টা করেছি সমকালীন জাতীয় ও বৈশ্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘কবিতার কী ও কেন’ এবং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘পার্থিব’ গ্রন্থ দু’টি থেকে কয়েকটি লাইন ব্যবহার করেছি নাটকের সংলাপে।”
নাটকের নির্মাণ প্রসঙ্গে জানালেন, ‘নাটকের প্রয়োগকালে যথেষ্ট সচেতন থেকেছি মঞ্চক্রিয়ায় যেন সহজাত স্বতঃস্ফূর্ততার রসভঙ্গ না হয়। প্রয়োগভাবনায় দলের সহযোদ্ধা শিল্পী শাহীনুর রহমানের ভিজ্যুয়াল প্রজেকশন পরিকল্পনায় বিপুলভাবে উৎসাহিত হয়েছি, শিল্প-রচনায় এক অভিলাষী-প্রয়োগ-নিরীক্ষার আকাঙ্ক্ষা পেয়ে বসে আমাদের। নাটকের পুরো ব্যাপ্তিতে পেছনের ক্যানভাসে পাওয়া যাবে প্রাচ্য ও প্রাতীচ্যের জগদ্বিখ্যাত মহান কিছু পেইন্টিং। এছাড়াও রয়েছে শিল্পের অন্য মাধ্যমের প্রতিনিধিত্বশীল কিছু আইকন, যা এই নাটকের ভাবরসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। মঞ্চসজ্জা সাজেস্টিভ। মঞ্চ-আলো-পোশাক-কোরিওগ্রাফি-সংগীত আবহের রসায়নে চেয়েছি নাটকটি এর অন্তর্নিহিত গল্পের মতোই বাস্তবতা আর নৈর্ব্যক্তিকতার মাঝামাঝি থাক। এ শিল্প সৃজনের সঙ্গে অভিনেতৃরাসহ (অভিনয়ের নেতৃত্ব দানকারী) যারা আমার পাশে ছিলেন, তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। দর্শককূল নাটকটি সমাদরে গ্রহণ করলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।’
নাটকটিতে কবি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাট্যকার ও নির্দেশক নিজেই। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন মাজেদুল মিঠু, এস আর সম্পদ, ফরিদা লিমা, শাহনাজ জাহান, শাকিল মাহমুদ, আবীর সায়েম, মাহফুজ সুমন, আকিব বাবু, সরকার জামান, রুবেল অরভিল ও মোহাম্মদ রাকিব। মঞ্চ ও ভিজ্যুয়াল আর্ট নির্দেশনায় শাহীনুর রহমান, আলোক পরিকল্পনায় অম্লান বিশ্বাস, আবহ সংগীতে আবির সায়েম ও পোশাকে ফৌজিয়া করিম অনু। প্রযোজনা অধিকর্তা সাইফ সুমন।
‘অনুদ্ধারণীয়’ আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হবে।
অনুদ্ধারণীয় অনুস্বর চারুশিল্পী শাহীনুর রহমান নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন মহিলা সমিতি মিলনায়তন মোহাম্মদ বারী