হলি আর্টিজান হামলার রায়: সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
ঢাকা: হলি আর্টিজান হামলার মামলায় রায় ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরাও নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এর বাইরে গোয়েন্দা পুলিশ, এসবি, সিআইডিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মাঠে রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, রায় ঘিরে কেউ যাতে সুযোগ নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রায়ের আগের দিন বিকেল থেকেই ঢাকার আদালত চত্বর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহজনক গাড়ি ও ব্যক্তিকে তল্লাশি করতেও দেখা যায়।
রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়, মৎস ভবন, ওয়ারী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মতিঝিল, তাঁতী বাজার, রায়সাহেব বাজার মোড়, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, চকবাজার, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, ঘোলাইপাড়, দয়াগঞ্জ মোড় ও সুত্রাপুর এলাকায় পুলিশ ও র্যাবকে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়।
কুটনৈতিক পাড়া হিসেবে খ্যাত গুলশান ও বারিধারা এবং অভিজাত এলাকায় বিদেশি বসবাসকারী আছে এমন উত্তরা, ধানমন্ডি ও ডিওএইচএস এলাকাতেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তাকে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, রায় ঘিরে উগ্রবাদী বা নব্য জেএমবির অনুসারীরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে কে কী করছে তা নিবিড়ভাবে পর্বেক্ষণ করা হচ্ছে। জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোতেও নজরদারি করা হচ্ছে। সোয়াত, সিটিটিসি ও গোয়েন্দা পুলিশের সকল ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। রায় উপলক্ষে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার মামলায় রায়ের কথা মাথায় রেখে আমরা আজ থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যত দিন প্রয়োজন ততদিন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। জঙ্গিরা যেন কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করতে পারে সে দিকটা আমরা সব সময় খেয়াল করছি। আমরা অনেক কাজ করি কিন্তু কখনও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের দৃষ্টি সরাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বুধবারের (২৭ নভেম্বর) রায় আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। হলি আর্টিজানের ঘটনায় দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। এ দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে মানুষ কখনও কল্পনা করেনি।’
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায়কে কেন্দ্র করে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নজরদারি করা হচ্ছে। রায় ঘিরে হামলার পরিকল্পনা জঙ্গিদের রয়েছে এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। দেশের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক এবং ভয়াবহতম হামলার রায় নিয়ে উগ্রবাদীদের কী রকম প্রতিক্রিয়া হয় সেটা যেহেতু জানা নেই তাই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার মামলায় রায়ের আগে ও পরে নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পেলে সাথে সাথে সেখানে রেসকিউ টিম কাজ করবে। এজন্য ফায়ার সার্ভিস, গোয়েন্দা টিম, সোয়াত, স্পেশাল অ্যাকশন টিম, রিজার্ভ পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশসহ সকলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সকলেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছি।’
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মুনতাসির রহমান রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায় উপলক্ষে আদালত এলাকায় পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সারারাত টহল পুলিশ সতর্ক থাকবে। এছাড়া পেট্রোল পার্টি, রায়ট কার ও জল কামানের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, হলি আর্টিজানে হামলার মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে রায়ের জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। এরই মধ্যে আসামিদের বিভিন্ন কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে। আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। বুধবার তাদের সবাইকে আদালতে তোলা হবে। তাদের উপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হবে।