Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫২ কার্যদিবস শেষে হলি আর্টিজান মামলার রায় আজ


২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:১১

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রায় তিন বছর পাঁচ মাস পর ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। মামলার অভিযোগ গঠনের পর ৫২ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষে ঘোষণা হচ্ছে এই রায়।

আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার এ তারিখ ঠিক করেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠন হয় আদালতে। এরপর মোট ৫২ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে উপনীত হয়। মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আলোচিত এই মামলার আসামিরা হলেন— অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. গোলাম ছারোয়ার খান (জাকির) সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের প্রত্যাশা করছেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলছেন, বিচারক রায়ে অবশ্যই ন্যায় বিচার করবেন।

এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ শুনানিতে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলাটিতে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটির চার্জশিট ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে দাখিল করেন। এরপর ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন। অন্যদিকে, চার্জশিটে ২১ জন আসামির নাম থাকলেও তাদের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা যান। এই ১৩ জনকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি আট জনকে অভিযুক্ত করা হয় চার্জশিটে।

যে কারণে হামলা হলি আর্টিজানে

মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, জঙ্গি সদস্যরা বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পরিদর্শন করার পর হলি আর্টিজান বেকরিকে হামলার জন্য বেছে নেন। কারণ হিসাবে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, একসঙ্গে অনেকগুলো বিদেশি নাগরিককে হত্যা করতে পারলে তারা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে পারবেন। তাই তারা হামলার দুই মাস আগে থেকেই রেকি করে হলি আর্টিজানকে বেছে নেন।

মামলার চার্জশিট দাখিলের সময় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা ভেবেছিল বেশি বিদেশি নাগরিককে হত্যা করলে আন্তর্জাতিকভাবে বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে। এ জন্যই তারা হলি আর্টিজানকেই বেছে নেয়।

নব্য জেএমবি হামলা জলি আর্টিজানে

হলি আর্টিজানে হামলার পেছনে ছিল জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। ২০০৫ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) কিছু সদস্য এই সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

চার্জশিটে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের দিকে শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জেএমবি। রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বহারা নিধনযজ্ঞ শুরু হলে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। ওই সময় ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে ওই বছরেরই ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালায় জেএমবি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে একসময় জেএমবি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে এলে নব্য জেএমবি নামে ফের সংগঠিত হতে শুরু করে জঙ্গিরা। একপর্যায়ে তারা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে ঢাকায় বড় একটি হামলার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়িত করে হলি আর্টিজানে।

সীমান্ত থেকে আসে অস্ত্র

হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটে বলা হয়, জেএমবির জঙ্গিরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাত। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করে নতুন সদস্যদের দলে ভেড়াত তারা। এরপর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হতে বাধ্য করতেন। একপর্যায়ে নতুন যুক্ত হওয়া সদস্যরা পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে আত্মঘাতী স্কোয়াডে সামিল হয়ে যেতেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, নব্য জেএমবির সংগঠনের বায়াত গ্রহণকারী সদস্যরা তাদের নিজস্ব সম্পদ ও অর্থ সংগঠনের কাজে ব্যয় করতেন। যেকোনো হামলার ক্ষেত্রে অর্থের জোগান দিতেন উচ্চ পযার্য়ের নেতা। হলি আর্টিজান হামলার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। আর ওই সব উচ্চ পর্যায়ের নেতারা নিজেরা আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যদের হামলা করতে পাঠিয়ে দেন।

হলি আর্টিজানে হামলার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে। ছদ্মবেশী জঙ্গিদের হাত ঘুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাঘাটার নির্জন সীমান্ত এলাকা থেকে রিকশা ও পরে বাসে করে অস্ত্র আসে ঢাকায়। সিএনজিতে করে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয় হামলাকারীদের হাতে।

হলি আর্টিজান হামলার আগে গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে অনেক কৌশলও অবলম্বন করতে হয় জঙ্গিদের। জানা যায়, এ হামলার ছক তৈরি করা হয় গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার বোনারপাড়া বাজারের কলেজ মোড় সংলগ্ন সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও বাইক হাসানের ভাড়া বাসায়। হামলার পরিকল্পনা গৃহীত হয় কয়েকটি স্তরে।

হলি আর্টিজানে নৃশংসতা

দীর্ঘ পরিকল্পনার পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলে পড়ে জঙ্গিরা। হামলায় রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন নাগরিকসহ রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের মধ্যে দু’জন প্রাণ হারান। একই ঘটনায় জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে মারা যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।

ঘটনাস্থলে তাণ্ডব চালানোর পর রাতভর রেস্তোরাঁয় আসা বাকি অতিথি ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি কমান্ডো টিম পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।

হামলার সাত দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

চার্জশিট থেকে জানা যায়, জঙ্গি সদস্যরা হলি আর্টিজানে প্রবেশের ২০ মিনিটের মধ্যে গুলি করে ও গলা কেটে একে একে ২২ জনকে হত্যা করে। ওই সময় তারা একজনের সামনে অন্য একজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে লাশের সারি মেঝেতে রেখেই খাবার খায়। হত্যাকাণ্ডের ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে অন্য জঙ্গিদের কাছেও পাঠায়।

জঙ্গি হামলা মামলার রায় হলি আর্টিজান

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর