হলি আর্টিজান হামলার রায়ে সরব বিশ্ব গণমাধ্যম
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:১০
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার রায় গুরুত্বসহকারে ছাপিয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। বিবিসি, আল-জাজিরা, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে ওঠে আসে নৃশংসতম এই জঙ্গি হামলার নানা দিক।
রায়ে আদালত এই ঘটনায় সম্পৃক্ত ৭ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে খালাস দেওয়া হয়েছে এক আসামিকে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) প্রায় তিন বছর পাঁচ মাস পর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সবাই এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ৫ জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২জনকে হত্যা করে। ইসলামিক স্টেট বা আইএসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গিরা এই হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেরে প্রচারের জন্যই তারা বিদেশিদের হত্যার পরিকল্পনা করে।
আল-জাজিরা
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা আল-জাজিরার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ খবর হিসেবে ছাপা হয়েছে হলি আর্টিজান হামলার রায়। খবরের শিরোনামে জানানো হয়, ঢাকার হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার আদালত। সংবাদে আরও বলা হয়, একজনকে দেওয়া হয়েছে খালাস। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের সেই হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন বিদেশি।
বিবিসি
বিবিসি অনলাইন জানায়, ৫ জঙ্গি ক্যাফেতে হামলা চালায়। রায়ে দণ্ডিতরা হামলার পরিকল্পনা করেছে ও হামলাকারীদের অস্ত্রের জোগান দিয়েছে। ১২ ঘণ্টার ক্যাফে জিম্মি ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারওয়ার খান বলেন, সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ঢাকার ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্ত থাকার অপরাধে ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই চালানো সেই হামলায় নিহতদের ১৭ জনই ছিলেন জাপান, ইতালি ও ভারতের নাগরিক। ইসলামিক স্টেট বা আইএস সে সময় এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বিবৃতি দিলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হামলাকারীরা আইএস নয় বরং দেশটির অভ্যন্তরীণ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
রয়টার্স
তিন বছর আগে ঢাকার ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় কূটনৈতিক পাড়ায় আতঙ্ক তৈরি করে বলে সংবাদে জানায় রয়টার্স। খবরে বলা হয়, ২২ জনকে হত্যার সেই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর অভিযুক্তরা আদালতে আল্লাহ আকবর বলে স্লোগান দেয়। দেশটির ইতিহাসের নৃশংসতম এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি।
হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় যারা মারা যান
মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, জঙ্গি সদস্যরা হলি আর্টিজানে প্রবেশের ২০ মিনিটের মধ্যে গুলি করে ও গলা কেটে একে একে সবাইকে হত্যা করে।
এই ঘটনায় মারা যান রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন, ভারতীয় ১ ও বাংলাদেশি ৩ নাগরিক।
এছাড়া জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে ক্যাফের বাইরে মারা যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।
নিহতরা হলেন,
তিন বাংলাদেশি, অবন্তি কবির (১৮), ফারাজ হোসেইন (২০), ইশরাত আকন্দ।
এক ভারতীয় নাগরিক, তারুশি জেইন (১৮)।
নয় ইতালীয় , ক্লাউদিয়া মারিয়া ডি এন্তোনা (৫৬), সিমোনা মন্টি (৩৩), মারকো তোন্দাত, নাদিয়া বেনেদেত্তি (৫২), আদেলে পুগলিসি (৫০), ক্রিসটিয়ান রোজি (৪৭), ক্লাউডিও কাপেল্লি (৪৫), ভিনসেনজো দাল্লেসত্রো (৪৬), মারিয়া রিবোলি (৩৪)।
সাত জাপানি , তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো।
দুই পুলিশ কর্মকর্তা, কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান, রবিউল করিম।
এছাড়া, রাতভর জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন ‘থান্ডারবোল্ট’ এর মাধ্যমে জঙ্গিদের নিবৃত্ত করে। পরে সেখান থেকে হামলাকারী ৫ জঙ্গির সঙ্গে রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
অভিযানে নিহত ৫ জঙ্গি, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ।
হলি আর্টিজান হামলা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো—
অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৬(২) (অ) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
খালাস পেয়েছে নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।
আল-জাজিরা বিবিসি বিশ্ব গণমাধ্যম রয়টার্স রায় ঘোষণা হলি আর্টিজান মামলা