Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসামিদের আচরণে কোন অনুশোচনা ছিলো না!


২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:০২

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে রায় শোনার পর দণ্ডপ্রাপ্ত কোন আসামির আচরণে অনুশোচনার প্রকাশ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা। বরং উল্টো ঔদ্ধত্য প্রকাশ দেখা গেছে। এমনকি হুমকি-ধমকিও করতে দেখা গেছে তাদের।

র‌্যাব-পুলিশকে যেখানে পাবে সেখানেই হামলা করার হুমকিও দিয়েছে জঙ্গিরা।

আদালত প্রাঙ্গণে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় অপরাধের পর সাধারণত অপরাধীদের আচরণে অনুশোচনা প্রকাশ পায়। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত এসব জঙ্গির কারো আচরণে অনুশোচনার প্রকাশ ছিলো না। রায় ঘোষণার পর থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত ত্যাগ করা পর্যন্ত এরা প্রচণ্ড ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছে। র‌্যাব-পুলিশকে দেখা মাত্র হামলার হুমকি দিয়েছে। জঙ্গিদের একজনের মাথায় আইএসের টুপি পরে উগ্রবাদী বক্তৃতা করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও তাকে প্রসাশনকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতেও শোনা যায়।

এতে করে বোঝা যায় তাদের এখনো কোন সংশোধন হয়নি, তারা জঙ্গিই রয়ে গেছে, বলেন এই আইনজীবী।

একজন আসামির খালাস হওয়া প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল বলেন, যাকে খালাস দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আরও দশটি মামলা রয়েছে। অন্য একটি মামলায় সে দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। সুতরাং এটা বলা যায়, এই মামলায় খালাস হলেও প্রকৃতপক্ষে তার খালাস হয়নি। এছাড়াও বর্তমান মামলায় পুরো রায় প্রকাশ পেলে তার খালাসের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে বলেও জানান এই আইনজীবী।

খালাস পাওয়া আসামি মিজানুর রহমান ওরয়ে বড় মিজানের বিষয়ে শেখ মঈনুল করিম আরও জানান, মূল আইন হচ্ছে প্রয়োজনে একশজন আসামি খালাস পাবে কিন্তু একজন নিরপরাধ মানুষ যেন শাস্তি না পায়। তবে এই জঙ্গি অপরাধী হয়ে থাকলে উচ্চ আদালতে তা এখনো প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) সাত আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার আরেক আসামি নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সবাই এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও ঘোষণা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৬(২) (অ) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এই আসামিরা প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এই হামলা চালিয়েছিলো। যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তামিম। এই রায়ে ন্যায় বিচারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই নৃংশসতম ওই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জন নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর প্যারা কম্যান্ডোর অপারেশন থান্ডারবোল্ড-এ নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি সদস্যও।

সারাবাংলা/টিএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর