Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ’


১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৪৬

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। অথচ মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। দেশটি তাদের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন এবং গণহত্যার মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ন্যায়বিচার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গত বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় বৃস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত) নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন। নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নীতি উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) সেমিনারটির আয়োজন করে।

আইপিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. অ্যাডাম লুপেলের সঞ্চালনায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কখনোই কোনো সংঘর্ষ বা সমস্যা হয়নি। দেশটির একাধিক বিপদের সময় বাংলাদেশ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং বাংলাদেশ ঝুঁকিতে পড়েছে।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। যা এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়নি। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশকে ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিতে হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিগত ১৯৯১-৯১ সালেও মিয়ানমার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তখন মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ বৈঠক করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করে। কিন্তু তারপরও ওই সময়ের ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে রয়ে গেছে। যা মিয়ানমার এখনো ফিরিয়ে নেয়নি।’

‘এরপর ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে প্রবেশ করেছে। তারাও বাংলাদেশের একাধিক আশ্রয় শিবিরে রয়েছে। ২০১৬ সালেও প্রবেশ করেছে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।’

‘সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। শুধু কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরেই রয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ বড় আশ্রয় শিবির।’

মো. শহীদুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশকে বহুমুখী ক্ষতি ও ঝুঁকি পোহাতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সীমান্ত নিরাপত্তা, সামাজিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা তাদের এলাকাতে এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।’

‘রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশের বনভূমি উজাড় হচ্ছে। প্রতিদিন ৭৩০টি গাছ কাটা হচ্ছে। এদের কারণে বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় শ্রম বাজারে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে নতুন সমস্যা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর অনুদান দিতে চাচ্ছে না। আর সামনের বর্ষা মৌষুমে যে কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ খুবই চিন্তিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিশু। ৩০ হাজার নারী সন্তানসম্ভবা। ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম। আর ৭ হাজার ৭৭১ জন শিশুর কোনো অভিভাবক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশের ৪ হাজার ৭০৭ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে বনভূমিও রয়েছে।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এই সংকট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ যাবতীয় সকল কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সম্পন্ন করেছে। মিয়ানমার বলেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে। অথচ এখনো রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। তারা প্রতিদিনই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।’

বিশ্ববাসীর প্রতি ন্যায় বিচারের আহ্বান জানিয়ে সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।’

দেশটি তাদেরই নাগরিক এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করছে, এই অমানবিক নির্যাতনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন এবং রোহিঙ্গাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে যথাযথ পদেক্ষপ নিন।’

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর