অবিচার ও বৈষম্য হাওর অঞ্চলের দারিদ্র্যের মূল কারণ: এম এ মান্নান
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:১৯
ঢাকা: অবিচার ও বৈষম্যকে হাওর অঞ্চলের দারিদ্র্যের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘তথাকথিত প্রভাবশালী দুনীতিবাজরা শহরে বাস করেও অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে আসছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে একটি জাতীয় পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘হাওর উন্নয়নে সমন্বিত প্রয়াস’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি (আইডিপি) এই সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
এম এ মান্নান বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের প্রকট দারিদ্র্য নির্মূল কোনো একক কর্মসূচির বিষয় নয়। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলে একক ও সামগ্রিক কর্মকৌশল বাস্তবায়নকল্পে ৩ হাজার ৫৫০ জন নারী পরিচালিত গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে বর্তমানে হাওরবাসী মানুষদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টি ও ওয়াশ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ সেবাসহ নানাবিধ তথ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সুনামগঞ্জের দিরাই, কিশোরগঞ্জের ইটনা এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় ৯ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
পূর্বে হাওর অঞ্চলের মাত্র ১০ শতাংশ পরিবার বিভিন্ন সেবার আওতাভুক্ত ছিল, যা এখন আইডিপির কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৯৬ শতাংশ নারী অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। এরইসাথে কর্ম এলাকায় স্যানিটেশন ১৭ শতাংশ থেকে ৭২ শতাংশে এ উন্নীত, ৪৭ হাজার ৫২৪ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত এবং ৯০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।
পাশাপাশি, সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির অংশগ্রহণকারীগণ উন্নত মানের বীজ, বসতভিটায় জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ, গবাদিপশুর টিকাদান, আর্থিক-অন্তর্ভুক্তি, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভকালীন এবং প্রসূতি সেবাসহ তথ্য সেবা পেয়ে থাকে।
হাওরাঞ্চলে সমন্বিত কর্মসূচি পরিচালনার অর্জিত শিখন উপস্থাপনা শেষে ‘হাওরে সমন্বিত উন্নয়ন: ভবিষ্যতের রূপকল্প’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচকেরা বলেন, হাওর অঞ্চল প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে থাকে। তাই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে সর্বদা অস্থিতিশীলতা এবং ভীতি বিরাজ করে। একইসঙ্গে সম্পদ এবং সেবা সীমিত হওয়ায় হাওর এলাকার মানুষেরা দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দুর্ভোগ এবং চরম দারিদ্র্যের শিকার। এই চিত্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবাসুবিধা দিতে সম্মিলিত এবং উপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
তারা আরও মতামত দেন যে হাওর অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি এবং চাহিদাভিত্তিক সেবার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় যুক্ত করতে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরিতে একীভূত উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ-এর পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ-এর সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক ড. আলী মুহম্মদ ওমর ফারুক, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিনজ, কেয়ার বাংলাদেশ-এর সৌহার্দ্য-৩-এর চিফ অব পার্টি ওয়ালটার মাওয়াসা, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড হেড অব এইড এঞ্জেলা নাউম্যান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিদ্দিকুর রহমান।