Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরিষার মধ্যে ভূত না থাকলে আইএস টুপি পৌঁছানো সম্ভব নয়’


২৭ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২৪

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগানের মাথায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতীক খচিত টুপি থাকার বিষয়টি কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ। কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ‘সরিষার মধ্যে ভূত’ না থাকলে ওই টুপি রিগানের কাছে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না বলেও মনে করেন তিনি। এ ঘটনায় জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের সহযোগিতা থাকতে পারে বলে ধারণা তার। তবে যেভাবেই ঘটে থাকুক, এই টুপির মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। আর প্রচারের সুযোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য তার।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর বিকেলে এসব কথা বলেন আব্দুর রশিদ।

আরও পড়ুন- আসামির মাথায় আইএসের টুপি! কিভাবে এলো?

ঘটনার ধারাবাহিকতায় জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের কেরাণিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে দুপুর ১২টার দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। আদালতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা জানাচ্ছেন, রায় ঘোষণার পরপরই রিগানের মাথায় আইএসের ওই ‍টুপি দেখা যায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে- আগে থেকে প্রস্তুতি রেখেই টুপিটি পরেছেন এই জঙ্গি সন্ত্রাসী। তিনি জঙ্গিদের অস্ত্র বিষয়ক প্রশিক্ষক ছিলেন বলেই জানানো হয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগার থেকে নিশ্ছিদ্র তল্লাশি করে তবেই আসামিদের পাঠানো হয়েছে আদালতে। প্রিজন ভ্যানে করে তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু করে এজলাসে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই ছিল কঠোর নিরাপত্তা। এরকম নিরাপত্তা ভেদ করে রিগানের মাথায় আইএস টুপি কিভাবে স্থান পেল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, যেগুলোর কোনো উত্তর দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, টুপিটি সে কোথা থেকে পেল, সেটি একটি বিশাল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমরা জানি, বিভিন্ন মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। এই পৃষ্ঠপোষকতার কারণে আসামি কারাগারে বসেই এই টুপি পেয়ে থাকলেও অস্বাভাবিক কিছু হবে না। তাদের অনেক সমর্থক আছে বিভিন্ন স্থানে। তাদের কেউও এমন সহযোগিতা করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা জঙ্গিরা সতর্কভাবে করেছে বলেই মনে করেন আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, তারা (জঙ্গিরা) সবসময় প্রচার পেতে যায়, সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। আজ গণমাধ্যমসহ সবার দৃষ্টি ছিল আজ তাদের দিকে। এমন একটি দিনে এই টুপির ঘটনাটি তাদের বড় একটি প্রচারণা দিয়েছে।

‘সরিষার মধ্যে ভূত’ না থাকলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এই টুপি সরবরাহ প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘তারা যেখানে ছিল, সেখানে সাধারণ কারও যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের নিরাপত্তায় যুক্ত ছিল প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যেই কেউ র‍্যাডিকালাইজড হয়ে এ কাজটি করেছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সরিষার মধ্যে ভূত না থাকলে আসলে এমন বিষয় প্রায় অসম্ভব।’

এ ঘটনার তদন্ত খুব জোরালোভাবে করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, জঙ্গিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা হয়তো এই টুপির গুরুত্বই বোঝেননি। এমনকি যখন এটি পরা হয়েছে, তখনো তারা কেউ খেয়ালই করেননি। গণমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে তবেই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে পড়ে। এর মধ্যে প্রশাসনের ব্যক্তিদের এক ধরনের খামখেয়ালিপনাও আছে। হয়তো সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ব্যক্তি জানেই না সেই টুপির প্রতীকী অর্থ কী। আর সেই কারণে হয়তো তাকে সেই টুপি পরা থেকেও নিবৃত্ত করা হয়নি।

এ ঘটনার জোরালো তদন্তের দাবি জানিয়ে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ আবারও বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। সরিষার মধ্যে যদি ভূত থাকে, তবে তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বিভিন্ন স্থানে এই জঙ্গিবাদের মতাদর্শের লোকজন থাকতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভেতরেও তাদের অবস্থান আছে কি না, সেটি তদন্ত করে খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

টুপির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের কাছেও। তিনি বলেন, এটা তো আমার জানার কথা নয়। তবে অবশ্যই বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। এই প্রেস কনফারেন্স শেষ করেই আমি এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জানা মতে আইএসের কোনো টুপি নেই। সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো টুপি তারা তৈরি করেনি। তারপরও তাদের কোনো টুপি আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করে দেখব। পাশাপাশি কারও গাফলতির কারণে এ রকম টুপি এজলাসে এসেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।’

এদিকে, এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফা কামাল পাশা বলেন, আমরা গণমাধ্যমে এক আসামির মাথায় বিশেষ ধরনের কালো একটি টুপি দেখতে পেয়েছি। এই টুপি সে কোথায় পেয়েছে, কারাগার থেকে সে টুপি সংগ্রহ করেছে কি না— এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজি প্রিজন) কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।

সারাবাংলা/এটি/এমএম

আইএস আইএস টুপি জঙ্গি রিগান মাথায় আইএস টুপি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ রাকিবুল হাসান রিগান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর