‘দেশপ্রেমিকদের নিয়ে কটূক্তি করতে এরা দ্বিধা করে না’
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩৭
ঢাকা: ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ ডা. শামছুল আলম খান মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেছেন, মিলনের হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই আজ দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে, গণতন্ত্রের চর্চা করছে। সেই কারণেই হয়তো সেই দলের একজন নেতা কিছুদিন আগে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কটূক্তি করে বলেছিলেন, `নূর হোসেন একজন ইয়াবাখোর, নেশাখোর ছিল। অপর এক নেতা শহীদ মিলন সম্পর্কে বলেছেন, ‘মিলনকে হত্যা করা হয়েছে কি না, সেটা বিতর্কিত বিষয়।’ দেশের জন্য, জাতির জন্য যারা নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করে গেলো সেই দেশপ্রেমিকদের নিয়ে কটূক্তি করতেও এরা দ্বিধা করে না।
২৭ নভেম্বর (বুধবার) রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. মিলন চত্বরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএমএ’র তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ ডা.শামছুল আলম খান মিলনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডা. মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেন, ‘অনেকটা জায়গা জুড়ে আমার প্রিয় সন্তানের বুকের ছোপ ছোপ রক্তে যেন বাংলাদেশের মানচিত্রের ছবি ভেসে উঠেছিল। ২৯ বছর ধরে এ দৃশ্য আমি ভুলতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। এ দেশ ও সমাজের মানুষগুলো আমাকে ভুলতে দেয়নি। মিলনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার শরীরে থ্রি নট থ্রি গুলি পাওয়া গেছে। এই গুলিই প্রমাণ করে কারা তাকে হত্যা করেছে। মিলনের হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই আজ দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে, গণতন্ত্রের চর্চা করছে। আর তাই এই হত্যাগুলোর কোনো বিচার হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন মায়ের জীবনে তাঁর সন্তানের লাশ দেখার মতো মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক ঘটনা বোধ হয় পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। বুকে একটিমাত্র গুলির আঘাতে মিলন রাজপথে লুটিয়ে পড়েছিল। মিলনের গুলিবিদ্ধ স্থানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আমার চোখে আজও জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে সে স্থানটি।’
শহীদ মিলনকে যথাযথ সম্মান জানানো হয়নি জানিয়ে সেলিনা আখতার বলেন, ‘মিলন হত্যার পর ২৯ বছর পার হয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত শহীদ মিলনের স্মৃতি রক্ষায় একটি রাস্তার নামকরণ করা সম্ভব হয়নি। গত বছর ঢাকা দক্ষিণের মেয়রকে বলা হয়েছিল। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, কোনো রাস্তার নামকরণ করা সম্ভব হবে না। একজন সৎ, আদর্শবান, রাজনীতি সচেতন, নির্লোভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী শহীদকে শ্রদ্ধা জানাতে যে জাতি ব্যর্থ হয়, সে জাতির তরুণরা দেশপ্রেমে কখনো উদ্বুদ্ধ হয় না। রাজনীতি আসলে এখন আর রাজনৈতিক দলের নেই, চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, আজ ২৭ নভেম্বর। ডা. মিলন দিবস। ২৯ বছর ধরে তার মা কাঁদছে, সহপাঠীরা কাঁদছে। দেশের মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। মিলন যখন গুলিতে নিহত হন তখন আমরাও রাজপথে মিছিলে ছিলাম। মিলনদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে একটি সড়ক মিলনের নামে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তার মা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করব।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের গভীরভাবে স্মরণ করছি। আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। তিনি নিজ দলের লোকদেরও ছাড় দেননি। ডা. মিলন হত্যাকারীদেরও বিচার করবেন প্রধানমন্ত্রী।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
জাহিদ মালেক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ডা. রোকেয়া সুলতানা দেশপ্রেমিক বেগম মতিয়া চৌধুরী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম শহীদ ডা. শামছুল আলম খান মিলন সেলিনা আখতার