মুজিববর্ষ উদযাপন করবে ইউনেস্কো
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৪২
ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে এক প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মণি জানান, গত ২৫ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে সংস্থাটির ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউনেস্কো যুক্ত হওয়ায় আগামী ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত দেশজুড়ে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের নানা কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন হতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যৌথভাবে উদযাপনের জন্য ইউনেস্কোতে পাঠানোর প্রস্তাবটিতে অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৫ নভেম্বর ইউনেস্কোর সদরদপ্তর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে, ইউনেস্কো’র সাধারণ পরিষদের সভাপতি আলতে চেঙ্গিজারের (Mr. Altay Cengizer) সভাপতিত্বে এবং ইউনেস্কো মহাপরিচালক মিজ অদ্রে আজুলে (Ms. Audrey Azoulay) এবং বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের চেয়ারপারসনদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্লেনারি সেশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে পাস হয়।
বাংলাদেশের এ বিশাল অর্জনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে ইউনেস্কো সাধারণ সভার ৪০তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের প্রোগ্রাম অফিসার মোছা. শামিমা সুলতানা, প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব নির্ঝর অধিকারী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মো. মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবনাটি দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের এ প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে উত্থাপনের জন্য ভারত, জাপান, পোল্যান্ড, কিউবা এবং নেপাল কো স্পনসর করে।
এ বছরের এপ্রিল মাসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ২০৬তম ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর সাথে যৌথভাবে উদযাপনের প্রস্তাবটি ইউনেস্কো সাধারণ সভার ৪০তম অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর ইউনেস্কো সাধারণ সভার চলতি অধিবেশনের প্রোগ্রাম এবং বাজেট সম্পর্কিত এপেক্স (APX) কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবনাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সুপারিশসহ প্লেনারি সেশনে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এ সারসংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে উদযাপনের জন্য ইউনেস্কোতে পাঠানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন এর মহাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মো. মনজুর হোসেনকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রস্তাবনা প্রস্তুত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন এর প্রোগ্রাম অফিসার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রস্তাবনা প্রস্তুতি কমিটি দুটি সভার মাধ্যমে খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করে।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা সচিব এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বিশেষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বছরের ৯ জানুয়ারি প্রস্তাব বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন থেকে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়।