Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওসি মোয়াজ্জেমের ১৫ বছর কারাদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ


২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১৪

ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওই থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়ে সর্বোচ্চ সাজা ১৫ বছরের কারাদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

ওসি মোয়াজ্জেমের মামলার রায় আজ

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম। এ বিষয়ে ওই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সারাবাংলাকে জানান, ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ তিন ধারায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ তিনটি ধারার ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি জানান, ২৬ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারও পরিচিতি সংগ্রহ, দখলে রাখা ও সরবরাহের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। ২৯ ধারায় ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ তিনবছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। ৩১ ধারায় ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো কিছু প্রকাশের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উপক্রম হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামির সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে ১৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ডও হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, মামলাটি ১৭ কার্যদিবস শেষে রায়ের পর্যায়ে আসে। আগামী ২৮ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। মামলাটিতে ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আসামি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের সময় তিনিও ভিডিও ধারণ করেছেন। সেই হিসাব ধরলে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও একই অপরাধ করেছেন। আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আলামত আসামি বিরুদ্ধে যায়নি। আশা করি, ওসি মোয়াজ্জেম খালাস পাবেন।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে নজরুল ইসলাম শামীম সারাবাংলাকে জানান, ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ অভিযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। মামলার আইও ভিডিও ধারণ করতে পারেন মামলার তদন্ত সাপেক্ষে। কিন্তু তিনি ভিডিওটি প্রকাশ করেননি। আইও’র রেকর্ড করা ভিডিওটি বাইরে প্রকাশ হয়নি। অপরদিকে ওসি মোয়াজ্জেমের ধারণকৃত ভিডিওটি প্রকাশ পেয়েছে।

এর আগে, গত ২০ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। গত ১২ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এই মামলার ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান ওসি মোয়াজ্জেম। ওই সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এই আবেদন গ্রহণ করে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৩ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। একই মাসের ২৭ তারিখে চার্জশিট গ্রহণ করে সাক্ষীগ্রহণের আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, সোনাগাজীর ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিতে থানায় গিয়েছিলেন নুসরাত। সে সময় ওসি মোয়াজ্জেম তার অভিযোগ গ্রহণ না করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ওই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়েও দেন ওসি মোয়াজ্জেম।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ রুমে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। কারাগারে থেকেই নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকেন সিরাজ। তবে মামলা তুলে না নেওয়ায় নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন অধ্যক্ষের সহযোগীরা। পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাতের মৃত্যু হয়। নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ।

১৫ বছর কারাদণ্ড ওসি মোয়াজ্জেম সর্বোচ্চ সাজা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর