মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট: বেশি দাম প্রস্তাব, মেলেনি ক্রয়ের অনুমোদন
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
ঢাকা: ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কিনতে ৬৭ শতাংশ বেশি দাম প্রস্তাব করায় এতে অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সেইসঙ্গে চার-পাঁচটি কোম্পানির সাথে কথা বলে একটি প্রতিযোগিতা পূর্ণ দর নির্ধারণ করে ১৫ দিনের মধ্যে ফের প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একই পরিমাণ এমআরপি পাসপোর্ট কিনতে আগে যে খরচ ধরা হয়েছিল এবার তার চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি দাম প্রস্তাব করায় সেটিতে অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এবারও ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।’
আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, যেহেতু সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এগুলো কেনা হবে, সেহেতু এক্ষেত্রে টেন্ডার প্রয়োজন হবে না। সুতরাং যারা এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে যদি দামটা কমাতে পারে এবং সেইসঙ্গে সরবরাহের সময়টাও যদি কমানো যায় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা উচিত।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটু সমস্যা হলেও কম দরদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ৬৭ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি অনেক বেশি। দাম এতটা বাড়ানো হলে কমিটির পক্ষেও এটা অনুমোদন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার কথা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের। কিন্তু এটা আজকে তারা প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। কারণ, আগের বারের চেয়ে তারা বেশি দাম প্রস্তাব করেছিল। ডিসেম্বর থেকে আমরা পাইলট বেসিসে ই-পাসপোর্টে যাচ্ছি। তবে এখনই বড় পরিসরে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আরও এমআরপি পাসপোর্ট প্রয়োজন।
সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ‘আরও ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এই দফায় ২০ লাখ এমআরপির সঙ্গে ২০ লাখ লেমোনেশন ফয়েলও কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এজন্য মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। এই পাসপোর্টগুলো সরবরাহ করার জন্য ‘আইডি গ্লোবাল সলিউশন লিমিটেড (সাবেক ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড) প্রস্তাব করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৫০ লাখ এমআরপি এবং দেড় কোটি লেমিনেশন ফয়েল ২৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় কিনতে যুক্তরাজ্যের ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাথে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ২০১৩ সালের ১২ জুন একটি চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী, ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল দেড় কোটি এমআরপি ও দেড় কোটি লেমিনেশন ফয়েল সরবরাহ করেছে।
মন্ত্রিসভায় কমিটির বৈঠকের জন্য পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বর্তমানে পাসপোর্টের চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার। চলতি নভেম্বরের ১২ তারিখে মজুদ পাসপোর্টের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৯৯৩টি এবং লেমিনেশন ফয়েলের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০টি। দ্বিতীয় ভেরিয়েশন অর্ডার অনুসারে সরবরাহের অপেক্ষায় আছে ১৪ লাখ ৮ হাজারটি পাসপোর্ট বুকলেট, যা দিয়ে সর্বোচ্চ। এগুলো দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। অন্যদিকে ‘ভেরিডস জিএমবিএইচ’র সাথে চুক্তি মোতাবেক পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে (দেশে ৬৯টি) এবং বিদেশে সব মিশনে (৮০টি মিশনে) ই-পাসপোর্ট চালু হতে আনুমানিক প্রায় ১৮ মাস সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে আগামী ডিসেম্বর থেকে ই-পাসপোর্ট চালুর কথা রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে সব পাসপোর্ট অফিসে এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত ১৮ মাস জনসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী এমআরপি প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। ই-পাসপোর্ট চালুর পর পর্যায়ক্রমে এমআরপি ইস্যু কমে যাবে এবং ই-পাসপোর্ট ইস্যু বাড়বে বলে সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।
