জামিন পেলেন মেজর হাফিজ, খায়রুল খোকন
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:০৪
ঢাকা: হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মো. হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় গ্রেফতার জাতীয়তাবাদী হর্কাস দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনও জামিন পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপি নেতাদের জামিন শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে ১০ হাজার মুচলেকায় জামিনের এ আদেশ দেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন এ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
এদিকে, গোলাম মোস্তফা খান, নজরুল ইসলাম ও তপনসহ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে আসামিদের জামিন প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে রাষ্টপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান এ জামিনের বিরোধিতা করেন। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ হাজার মুচলেকায় এ জামিনের আদেশ দেন।
জামিন আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল, লোহার রডসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনি সমাবেশ করেন। ওই সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা স্লোগান দিতে দিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। এর মাধ্যমে বেআইনিভাবে সভাবেশ করে রাস্তা অবরোধ ও গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তারা। বাদী ও অন্যান্য কর্মকর্তাসহ বাহিনীর সদস্যরা তাদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও আসামিরা কর্তব্যরত পুলিশের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দায়িত্বরত একজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য মাথায় গুরুতর আঘাত পান।
আবেদনে আরও বলা হয়, আসামিরা রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। তখন নিজেদের জানমাল, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তব্যরত পুলিশ বেআইনি সমাবেশে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ওপরে গ্যাস নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ১৫০টি গাছের ডালের লাঠি ও ২০৩টি ইটের টুকরা জব্দ করা হয়। ওই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে উসকানি দিয়েছিল বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি তদন্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম-ঠিকানা, মামলার আলামত উদ্ধার এবং একই আসামিদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এজন্য তাদের রিমান্ড প্রার্থনা করছি।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। গাড়ি ভাঙচুর করতে করতে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সটকে পড়ে।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে একই এলাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।