কাপ্তাই লেকে ‘গবেষণা তরী’ ভাসালেন প্রধানমন্ত্রী
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৪৬
ঢাকা: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে গবেষণা তরীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবসৃষ্ট দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই তরী নির্মিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (সকালে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী (Research Vessel) উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময়ও করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গবেষণা তরী উদ্বোধনের আগে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অফুরন্ত সম্পদের এলাকা। এখানে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যেয়ে লেকটার সৃষ্টি করা হয়। অবশ্য লেকের কারণে ফলে মূল রাঙামাটি শহরটা এই লেকের নিচেই চলে যায়। এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা ছিল। তারপরও আমি বলব, নতুন ভাবে আবারও শহর গড়ে উঠেছে।’
‘এই লেক বিশাল এলাকা। অনেক বড় জলরাশি এখানে। আর তাছাড়া প্রাকৃতিক যে লেকগুলি এর সঙ্গে তারও সংযোগ আছে। সেখানে যে মৎস্য উৎপাদন হয়। সেই মৎস্য উৎপাদন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়েই উৎপাদন হয়। ওখানে কি ধরনের আরও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তার উপরে একটা গবেষণা করা প্রয়োজন। সেই কারণেই এখানে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে জাহাজটা নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের যারা মাছ নিয়ে গবেষণা করবে তারা সেখানে গবেষণা করতে পারবে, ওই লেকের কোথায় কোন অঞ্চলে অভয়ারণ্য করা যায় কোন জায়গাটায় বিশেষ করে মাছ ডিম পারার সময় হয় তারা ডিম পাড়ে বা সেগুলো সংরক্ষণ বা সেগুলি যেন নষ্ট না হয়, সেগুলো কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, মাছের উৎপাদন আরও বহুমুখী করা।
কাপ্তাইয়ের ভাসমান গবেষণার জন্য একটা ভাসমান প্রতিষ্ঠান হিসাবেই এই জাহাজটা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে যারা বিজ্ঞানী, যারা মৎস্য গবেষণা করেন তারা সেখানে যেতে পারবেন। ফলে এখানে মৎস্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে পারব’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গবেষণা তরী উদ্বোধনের সময় উপস্থিত থাকতে না পারার ঘটনায় আফসোস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আসলে জাহাজাটা দেখার পর মনে হচ্ছে, আমার নিজের বোধহয় ওখানে যাওয়া উচিত ছিল এবং নিজের একটু দেখা উচিত ছিল। আগামীতে একসময় আমি ভাবছি যে, গিয়ে একবার দেখব।’
ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে উদ্বোধন করা ভাসমান তরীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন। তিনি বিবরণীতে জানান, তরীটির দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার, প্রস্থ ৮ মিটার, গভীরতা ১.৫ মিটার, গতিবেগ ৮ নটিক্যাল মাইল। এটিতে তিনটি গবেষণাগার থাকবে। রিমোনলজি, ডিজিজ ও ফিশিং টেকনোলজি। তরীতে একটি জেনারেটর রয়েছে। এছাড়াও সোলার প্যানেল রয়েছে, যা থেকে রাতে সময়ে ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা হবে।
গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আরও তিনটি উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর গাজীপুরে নির্মিত ‘ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার’, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে প্রদত্ত সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নতুন ৫টি জাহাজ। উদ্বোধন শেষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে ভিডিও অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।