ঢাকা: হলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় আইএস টুপির উপস্থিতির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু থেকে আদালতের হাজতখানা, এজলাস— সবখানেই ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এর মধ্যে জঙ্গি রিগ্যানের কাছে কিভাবে সেই টুপিটি সরবরাহ করা হয়, তা নিয়ে সদুত্তর মেলেনি কারা কর্তৃপক্ষ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও। তবে ঘটনা প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারা কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। টুপি রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।
https://youtu.be/YhaW2BZuUNs
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি রিগ্যানের মাথায় আইএস টুপির ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ভুয়া আইনজীবীকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে এক নম্বরে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ওই ব্যক্তির চলাফেরা, গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক আচরণ, কথাবার্তাও অসংলগ্ন। তাছাড়া রিগানকে পাঁচ তলায় ওঠানো ও নামানোর সময় যেভাবে ওই ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তাতে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনিই রিগানকে এই টুপি সরবরাহ করে থাকতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের বটতলায় একটি সূত্র থেকে সারাবাংলার হাতে আসে একটি ভিডিও ক্লিপ। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা যখন লিফটে করে জঙ্গি রিগ্যানকে নামাচ্ছিলেন, তখন কালো কোট ও সাদা শার্ট গায়ে একজন লোকও ওই লিফট থেকে নামছেন। তাকেই টুপি সরবরাহকারী হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন গোয়েন্দারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে আদালতের ষষ্ঠ তলায় ঢাকার বিশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকেই। সারাবাংলার হাতে আসা ভিডিও ক্লিপে যে ব্যক্তিকে দেখা যায়, এই ব্যক্তি তিনিই। তাকে দেখতে পেয়েই ডেকে আনা হয় বারান্দায়। পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, তিনি একজন আইনজীবী। জিজ্ঞাসা করলে জানান, হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন আদালত চত্বরে ছিলেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সারাবাংলার হাতে আসা ভিডিও ক্লিপটি দেখালে স্বীকার করেন, ভিডিও’র ওই ব্যক্তি তিনিই। তার সঙ্গে কথোপকথনটি ছিল এমন—
আপনার নাম?
– রুবেল।
পুরো নাম কী?
– রুহুল আমীন খান রুবেল।
আপনার বাড়ি কোথায়?
– চট্টগ্রাম।
আইনজীবী হলে টাই পড়েননি কেন?
-জ্বি, আমি এখনো সনদ পাইনি। তাই টাই পড়ি নাই।
সনদ না পেলে এখানে কী করেন?
– অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করি।
অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করলেও তো আইডি কার্ড থাকবে। সেটা আছে আপনার?
– জ্বি, আছে।
আপনি জঙ্গি রিগানের সঙ্গে লিফটে নামলেন কিভাবে?
– ওপরে ওঠার সময় তার সঙ্গে লিফটে দেখা হয়েছে।
এরপর রুবেলের কথাবার্তা খানিকটা অসংলগ্ন হয়ে পড়ে। একটু পরেই বলেন, রিগ্যানকে ওপর থেকে নিচে নামানোর সময় দেখা হয়েছে। এসময় তার আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তা আর দেখাতে পারেননি। এরই মধ্যে পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলেন, ফোন এসেছে, একটু কথা বলি। বলতে বলতেই ফোন কানে নিয়ে সামনে যান এবং প্রায় দৌড়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন। পরে তাকে আর আশপাশে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এর আগে, হলি আর্টিজান মামলার রায় ঘোষণার আগে বুধবার (২৭ নভেম্বর) কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে আট জঙ্গিকে নিয়ে আসা হয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে। তাদের যখন প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়, তখন রিগ্যানের মাথায় কোনো টুপি দেখা যায়নি। হাজতখানা থেকে যখন এজলাসে নেওয়া হয় রায় ঘোষণার আগে, তখন তার মাথায় দেখা যায় কালো একটি টুপি। গোল টুপিটিতে কোনো ধরনের চিহ্ন বা প্রতীক ছিল না। তবে রায়ের পর এজলাস থেকে যখন বের করা হয় রিগ্যানকে, তখন তার মাথায় দেখা যায় আইএসের সেই টুপি। আদালতে উপস্থিত অনেকেই জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার পর তার মাথায় এই টুপি দেখা যায়।
রিগ্যানকে ফের কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার আগ মুহূর্তে অল্প কিছু সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় তার। ওই সময় রিগ্যান বলে, এটি আইএস টুপি। কারাগার থেকে এনেছি।
তবে রিগ্যানের এই দাবি প্রত্যাখান করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম। জানতে চাইলে বুধবারই তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে পাঠানোর আগে সঠিকভাবে তল্লাশি করা হয়েছে। এতে কোনো গাফিলতি বা ফাঁক-ফোঁকড় ছিল না। আমাদের ভিডিও ফুটেজ দেখলেও তল্লাশির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যাবে। যে টুপি নিয়ে কথা উঠছে, সেটির বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। ওখানে যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন, তারা হয়তো বলতে পারবেন।’
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার এবং ডিএমপি’র তদন্ত কমিটির প্রধান মাহবুবুল আলম বলেন, হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই আইএসের লোগো সম্বলিত টুপিটি নিয়ে এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে ডিএমপি’র তদন্ত কমিটি।