চলন্ত বাসে চবি ছাত্রীকে নিপীড়ন, ফেসবুকে স্ট্যাটাসের পর আটক ৩
১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চলন্ত বাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিনজন হলেন- সোহাগ পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারী এবং সুপারভাইজার।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) নগরীর চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এবং বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান।
আটক তিনজন হলেন- বাসচালক এহসান করিম (২৭) ও তার সহকারী ফররুখ আহমেদ ভুট্টো (৩৫) এবং বাসের সুপারভাইজার আলী আব্বাস (৩৫)। তাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং গ্রামে।
উল্লেখ্য, ২৭ নভেম্বর (বুধবার) চট্টগ্রামের পটিয়ায় বোনের বাসা থেকে নগরীতে ফেরার পথে সোহাগ পরিবহনের বাসে হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয় তুলে ধরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ওই ছাত্রী।
কক্সবাজার থেকে আসা নগর অভিমুখী বাসটিতে তিনি পটিয়া থেকে উঠেছিলেন। বাসটির গন্তব্য নগরীর বহদ্দারহাট ছিল উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, বহদ্দারহাটে তিনি নেমে যাবার চেষ্টা করলেও কন্ডাক্টর (সহকারী) তাকে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট নামিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তখন বাসটি পুরোপুরি খালি হয়ে যায়। তিনি দুই নম্বর গেইট নামার জন্য বাসে বসে থাকেন।
খালি বাসে হয়রানির শিকার হওয়ার বিস্তারিত বর্ণনার একপর্যায়ে তিনি লেখেন, ‘বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিলো আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষ ও নাই। আমি বললাম, ভাই আমাকে নামাই দেন, আমি ২ নম্বর গেইট যাব না।’
তখন বাসের হেলপার দরজা আটকে দেন বলে অভিযোগ করে তরুণী লেখেন, ‘আমি তখন ৯৯৯ টাইপ করছিলাম, এসময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়, আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সাথে টানাটানি করছিলাম আর চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয় আমি দরজার সাথে খুব জোরে বাড়ি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম আর চিৎকার করছিলাম। আমার হিজাব টানছিল দুইজন কন্ডাক্টরের (একজন সুপারভাইজার) একজন। আমি লাথি মারছিলাম দরজায় আর নিজেকে বাচাঁনোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম।’
ক্রমাগত চিৎকারের একপর্যায়ে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হয় বলে ফেসবুকে উল্লেখ করেন ওই ছাত্রী।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) আসিফ মহিউদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটা এতটাই শকড ছিল যে, তাকে কোথায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি বুঝতে পারেননি। বাসের নম্বরও তিনি মনে করতে পারছিলেন না। মামলাও করেননি। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা শাহ আমানত সেতুর পর থেকে দুই নম্বর গেইট পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে বাসটি শনাক্ত করি। সেখানে দেখা যায়, মেয়েটিকে নতুন চান্দগাঁও থানার অদূরে বাস টার্মিনালের পেছনদিকে একটি নির্জন স্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বাসটি সনাক্তের পর এর চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন।