Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বীরপ্রতীক তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:০০

ঢাকা: একাত্তরের রণাঙ্গনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের এই দিনে ৬১ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

রোববার (১ ডিসেম্বর) তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাচারীপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে কোরানখানি এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। মোছাম্মৎ তারামন বেগম যিনি তারামন বিবি নামে অধিক পরিচিত। শংকর মাধবপুরেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

শুরুর দিকে ক্যাম্পের ভাত তরকারি রান্না করা, অস্ত্র পরিষ্কার করে লুকিয়ে রাখার কাজগুলো করতেন তিনি। ক্যাম্পে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মাস্টার একদিন নদীর ওপারে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যদের খবর আনার কাজ দেন তারামন বিবিকে। প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও রাজি হয়ে যান তিনি। রাতের অন্ধকারে সারারাত নদীতে সাঁতার কেটে চলে যান নদীর অপর পাড়ে। গায়ে কাদা ময়লা মেখে পাগল সেজে পাকিস্তান ক্যাম্পে পৌঁছে যান। পাগল ভেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে গুরুত্ব না দিলেও সেই তারই এনে দেওয়া খবরের ভিত্তিতে সফল অপারেশন করে ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা।

পরবর্তী সময়ে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্লাটুন কমান্ডার মুহিব হালদার তারামন বিবিকে নিয়ে আসেন দশগরিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখানেই তারামন বিবিকে অস্ত্রচালনা শেখান মুহিব হালদার। স্টেনগান নিয়ে আলফা সিগন্যাল দেয়াও শিখানো হয় তাকে। আর এরপরেই শুরু তারামন বিবির সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ।

বিজ্ঞাপন

দেশ স্বাধীনের পর তারামন বিবি নিজ গ্রাম শংকর মাধবপুরে ফিরে আসেন। খুঁজে বের করেন বাবা-মা কে। সেখানেই চরে বাসা বেঁধে থাকা শুরু করেন। দারিদ্রতার মধ্যেই কাটে দিন। ১৯৭৩ সালে তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। কিন্তু তারামন বিবির খবর নেয় নি কেউ।

অবহেলা ও দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে থাকা তারামন বিবির বাকি চার বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তার বিয়ে হয় না। সবাই বলে ‘মেয়ে ভাল না, চরিত্র খারাপ। ক্যাম্পে থাকা মেয়ে।’ পরবর্তীতে আবদুল মজিদ নামের একজন তার মা কে তারামন বিবিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ১৯৭৫ সালে এক টাকার দেনমোহরে তারামন বিবির বিয়ে হয়। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে শুরু হয় তারামন বিবির নতুন জীবন।

মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

সরকারি গেজেট অনুযায়ী তারামন বিবির বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে ক্ষমতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান দেখে যিনি বলেছিলেন, ‘এই দ্যাশ বানের জলে ভাইসা আসে নাই।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলির গুরুত্ব তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে গিয়ে এই বীরপ্রতীক বলেছিলেন, ‘আমার যে সন্তানরে আমি মানুষ করছি, দশ মাস দশ দিন প্যাটে রাখছি। তারপর এই সন্তানদের বড় করতি অনেক কষ্ট লাগছে। তার চেয়ে ত্যাগুন কষ্ট আমাদের এই বাংলাদেশ স্বাধীন করতে আমার লাগছে।’

২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর তারামন বিবিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ময়মনসিংহ সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই বছর ১ ডিসেম্বর ভোরে কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার কাচরিপাড়া গ্রামের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১১ নং সেক্টর কুড়িগ্রাম টপ নিউজ তারামন বিবি বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর