Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ই-টেন্ডার বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগ, আওতায় আসবে বিদেশি ঠিকাদাররাও


১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:০২

সরকার অনলাইন বা ই-টেন্ডার চালু করেছে আট বছর হয়ে গেছে। অথচ এখনো কার্যক্রমটি পুর্নাঙ্গ রুপ পায়নি। আন্তর্জাতিক ও ছোট ঠিকাদাররা এখনো ই-টেন্ডারের এর বাইরে। ফলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের ক্ষেত্রে এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিগগিরই আন্তর্জাতিক ঠিকাদারদের অনলাইন নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে দেশের

বিজ্ঞাপন

অবকাঠামো উন্নয়ন ও সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি নির্মূলে ই-টেন্ডার বা ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ইজিপি পদ্ধতি চালু করা হয়। কিন্তু গেল আট বছরে এর অগ্রগতি খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু বিভাগ ও দফতর এখনো এই পদ্ধতি চালুই করতে পারেনি। এতে অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। আরো অভিযোগ রয়েছে, ই-টেন্ডারে নানা জটিলতা থাকায় ঘুরেফিরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই কাজ পাচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, সড়ক বিভাগের বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজ করে আব্দুল মোমেন লিমিটেড এবং তমা কনস্ট্রাকশন। স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজেরও বেশিরভাগ করছে এই দুই প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, কারাগারে থাকা সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান ‘জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ এককভাবে গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে সরকারের অর্ধশত প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত।

সূত্র বলছে, জি কে শামীমসহ বিশ্বাস বিল্ডার্স, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, মাসুদ অ্যান্ড কোম্পানি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, পদ্মা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসসহ আরো কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুধু গণপূর্ত অধিদফতরই নয়, সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল, স্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় অধিদফতর ও বিভাগের কাজ তারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন। সেই হিসেবে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ৯০ ভাগই এই কয়েকটি ঠিকাদারি কোম্পানি করে থাকে।

বিজ্ঞাপন

নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ক্রয় আইনে দুই ধরনের দরপত্র পদ্ধতি রয়েছে। এগুলোর একটি উন্মুক্ত আরেকটি সীমিত। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে (ওটিএম) সরকারি ক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক প্রাক্কলিত মূল্য অর্থাৎ কত টাকায় কাজ কিনতে আগ্রহী তা উল্লেখ থাকেনা। আর সীমিত (এলটিএম) দরপত্র পদ্ধতিতে তা উল্লেখ থাকে এবং তিন কোটি টাকা পর্যন্ত কেনাকাটা করা যায়। সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে ঠিকাদারের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন থাকে। সব দরদাতা এক রকম দর প্রস্তাব করলে, তা সীমিত পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে দরদাতা নির্বাচন করা যায়। কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সে সুযোগ নেই। জানা যায়, এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অতীত অভিজ্ঞতা ও বার্ষিক লেনদেন দেখে কাজ দেওয়া হয়। এখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা প্রশ্নে ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতেই কাজ চলে যায়।

এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে তার অধিদফতরের শতভাগ কাজ ই-টেন্ডারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাই কাজ পান। কিন্তু দরপত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের মধ্যে দর দেওয়ার বিধান থাকায় সব ঠিকাদারের দর নির্ধারণ এক হয়ে যায়। এতে ঠিকাদারদের বার্ষিক লেনদেন ও পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই নির্বাচিত হয়ে যায়। আর এই নিয়মের প্রতিযোগীতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাদ পড়ে যায় ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চায় ই-টেন্ডার পদ্ধতি দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষন মূল্যায়ন বিভাগ’-আইএমইডি। এসব বিষয় আমলে নিয়ে ক্রয় সংক্রান্ত আইনের দুর্বলতা দূর করতে আইনটির কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করে বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, আইএমইডির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. কামরুজ্জামান। দরপত্র বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের মধ্যে দর দাখিলের নিয়ম বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কম দরের ভিত্তিতে জামানতের টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়। আরো বলা হয়, দরপত্র বাস্তবায়ন অগ্রগতিকে কয়েক অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা রাখার কথা। ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানার প্রস্তাবও করা হয়। বঞ্চিত ছোট ছোট ঠিকাদারদের তালিকা তৈরি করে তাদের এককভাবে সীমিত দরপত্রে (এলটিএম) অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া। সেখানে তিন কোটি টাকার যে শর্ত আইনে রয়েছে তা কমানোর প্রস্তাব করা হয়।

এ প্রসঙ্গে মো. কামরুজ্জামান আরো জানান, এক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় আইনের যে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন। আইনী দুর্বলতায় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ পাওয়ার প্রতিযোগীতায় ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারেনা। কিন্তু এটা কোনো ভালো দিক নয়। তাই আইনটির কোথায় কোথায় সংশোধনী আনা যায়, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে ই-টেন্ডার পদ্ধতি ব্যবহারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাজ পাওয়া নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সংঘাত হতো, তা কমে গেছে।

অন্যদিকে, এখনো আন্তর্জাতিক ঠিকাদাররা ই-টেন্ডারের বাইরে রয়েছেন। জানা গেছে, তাদের নিবন্ধনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেই সরকারের। পাশাপাশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রকল্পগুলোর ঠিকাদার নির্বাচনে অভিযোগ রয়েছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতির সুযোগে বেশিরভাগ ঠিকাদার কমিশনের বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে থাকেন। তাই এখানেও স্বচ্ছতা আনতে চায় আইএমইডি। সেজন্য ই-জিপিতে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারদের অন্তর্ভূক্ত করার কাজ শিগগিরই শুরু করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ই-টেন্ডারের আওতায় আনা হবে। যতদিনে এই কাজ শেষ না হবে, ততদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২ জুন ই-টেন্ডার পদ্ধতির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত আট বছর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-জিপির আওতায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৪টি দরপত্র আহবান করা হয়। আর ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-জিপিতে সরকারের ৫৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ১ হাজার ৩৬৫ সংস্থা ও ওইসব সংস্থার অধীনে সারাদেশে ৮ হাজার ৫শ টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ই-টেন্ডারের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছে। আর ই-জিপিতে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারদের নিবন্ধন শুরু না হলেও এডিবি, জাইকা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, নেদারল্যান্ড, চীনসহ উন্নয়ন সংস্থার একাধিক ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৪ শ ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে নিবন্ধন করেছেন। সারাদেশে ৪৪ টি ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার শাখা ই-জিপিতে সেবা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

অনলাইনে টেন্ডার ই টেন্ডার সরকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর