Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহিউদ্দিনের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের আগ্রহ মেয়র নাছিরের


১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৪০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এছাড়া নগরীর নেভাল সড়কে তিন মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ ইউনুছের নামে চত্বর করারও ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র।

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন।

একই অনুষ্ঠানে মেয়রের সঙ্গে অতিথি ছিলেন মহিউদ্দিনের সহধর্মিণী ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেগম হাসিনা মহিউদ্দিনও।

বিজ্ঞাপন

গত ২৭ অক্টোবর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে সভামঞ্চ থেকে হাসিনা মহিউদ্দিনসহ দলের তিন নেতাকে নামিয়ে দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন মেয়র নাছির। বাকি দুজন হলেন- নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান এম এ ছালাম এবং কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী। তবে মেয়র জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরে যারা সভামঞ্চে উঠেছিলেন তাদের তিনি নেমে যেতে বলেছিলেন।

রোববার বিজয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের একপাশে ছিলেন হাসিনা মহিউদ্দিন, আরেকপাশে আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনুছ জানান, পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সিদ্ধান্তে মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উত্তরসুরী হিসেবে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মেয়র নাছির চট্টগ্রামে বিজয় মেলার উদ্যোক্তা প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘৩১ বছর আগে শুরু হওয়া এই বিজয় মেলার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসী মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাসের বদলে সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছিল। দীর্ঘসময় ধরে আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এই বিজয় মেলা হয়ে আসছিল। আমৃত্যু তিনি এই বিজয় মেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমরা যারা উনার অনুসারী আছি, উনি যে মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতেন, সেই মানসিকতা ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

মেয়র বলেন, ‘আগ্রাবাদ এক্সেস রোড যেটা বাদামতলী থেকে শুরু করে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার, সেটার কাজ চলছে। রাস্তাটা খুবই দৃষ্টিনন্দন হবে। জাইকার অর্থায়নে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাটা হচ্ছে। একপাশের কাজ শেষ হয়েছে। আরেকপাশের কাজ শুরু হবে। রাস্তায় এলইডি লাইট লাগানো হবে। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই রাস্তাটার নাম মহিউদ্দিন ভাইয়ের নামে হবে। আমাদের কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এটা অনুমোদন হয়ে যাবে।’

করতালির মধ্যে মেয়র নাছির আরও বলেন, ‘সেখানে যদি জায়গা পাই, তাহলে মহিউদ্দিন ভাইয়ের একটা আবক্ষ মূর্তি তৈরি করব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যানকে বলেছি। উনারা সেটা করবেন। ইনশল্লাহ মহিউদ্দিন ভাইয়ের আবক্ষ মূর্তি হবে।’

‘মুক্তিযুদ্ধের সময় এই নেভাল বেসের (নেভাল এভিনিউ) এখানে উনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী), মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং মোহাম্মদ ইউনুছ একসাথে গ্রেফতার হন। এটাকে স্মরণীয় করতে তিনজনের নামে এই চত্বর করবো। প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, রাজাকার-আলবদর-আলশামস তাদের সমূলে নির্মূল করতে হবে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে কাজ করেছে। শাহ আজিজ-নিজামীকে মন্ত্রী বানিয়েছে। পাকিস্তানের ভাবধারা নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। বিজয়ের মাসে এই রাজাকার-আলবদর ও তাদের দোসরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে হাসিনা মহিউদ্দিন সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, ‘গত বছর আমরা একবার মেলা করতে পারিনি, জাতীয় নির্বাচন বলে স্থগিত রেখেছিলাম। এবার আবার করছি। যতদিন এই বাংলাদেশ, এই চট্টগ্রাম, লাল-সবুজ থাকবে ততদিন আপনাদের বুকে মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকবেন। আপনাদের প্রমাণ করতে হবে বীর চট্টলার মাটি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘাঁটি। এই প্রজন্মের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। ইতিহাস জানে না। স্মৃতিচারণার মঞ্চে এসে শহীদদের, আমাদের মা-বোনদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে শুনবেন। ইতিহাস জানলে নিজেরাই সর্তক ও সুন্দর হয়ে যাবেন।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী। বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনূছের সঞ্চালনায় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষও বক্তব্য রাখেন।

এসময় নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন বাচ্চু, বদিউল আলম, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান, যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল হোসেন আবু, আরশেদুল আলম বাচ্চু, নুরুল আজিম রনি, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ছিলেন।

মাসব্যাপী মেলার মধ্যে ১০ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে বিজয় শিখা প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সাত দিনের ‘মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচারণ’ অনুষ্ঠান। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। বিজয় মঞ্চে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। ১৫ ডিসেম্বর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিজয় মঞ্চে নাগরিক শোকসভা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।

১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বর থেকে বের হবে বিজয় র‌্যালি। এতে নেতৃত্ব দেবেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চট্টগ্রাম মহিউদ্দিন মূর্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর