ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ ১৫ বছরেও শেষ হয়নি
২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:২৩
ঢাকা: তিন বছরের প্রকল্প। সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে বার বার সময় বাড়ানোর কারণে কেটে গেছে ১৫ বছর। তারপরও শেষ হয়নি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প। এখন আবার নতুন করে ব্যয় এবং মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রথমে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১১ সালের জুন দ্বিতীয়বার দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৫ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরেকবার দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ফের দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে তৃতীয়বারে মতো ব্যয় বাড়ছে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ কমপ্লেক্স চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ফের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৬৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এবার তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির সংশোধনীর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় একক উৎস পদ্ধতিতে একই প্রতিষ্ঠানকে পুনঃনিয়োগ, প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে সীমানা প্রাচীর এবং ল্যান্ডস্কেপিং অঙ্গ অন্তর্ভুক্তকরণ, কিছু সংখ্যক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যমান অংশের ব্যয় বৃদ্ধি, মিনি অডিটরিয়াম তৈরি এবং বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২ বছর বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি তৃতীয়বার সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর উপর চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ২০০৭ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় থেকে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিজস্ব চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।’
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের জন্য স্থায়ী নিজস্ব ভবন কমপ্লেক্স নেই। বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে দূতাবাসের কার্যক্রম চলছে। ২০০৩ সালে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদ কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়। ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশ হাইকমিশন জমির দখলভার নেয়। সেখানে স্থায়ী দূতাবাস ভবন নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি দল ২০০৬ সালের ২ থেকে ৫ আগস্ট ইসলামাবাদ সফর করে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর ২০০৭ সালের জুলাই থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে পাকিস্তানে বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।