প্রবৃদ্ধিতে ছায়া ফেলতে পারে বৈষম্য: পরিকল্পনামন্ত্রী
২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:২৮
ঢাকা: বৈষম্যের কারণে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রবৃদ্ধি একটি উপভোগ্য বিষয় হিসাবে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বৈষম্যর বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। বৈষম্যের কারণে প্রবৃদ্ধির ঢেউ ক্ষতি হতে পারে। প্রবৃদ্ধিতে বৈষম্য ছায়া ফেলতে পারে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা চিন্তা রয়েছে। কারণ বৈষম্যের কারণে প্রবৃদ্ধির সুফল সামাজিকভাবে সবার কাছে পৌঁছে না। ভুর্তকি, কর রেয়াতসহ সরকারের বিভিন্ন সুবিধা বিতরণেও সমস্যা হয় বৈষম্যের কারণে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে এক গবেষণা সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিআইডিএস তাদের বার্ষিক গবেষণা সম্মেলন উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। এখানে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। কিভাবে ফাঁক-ফোকর বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে আপনারা পরামর্শ দেবেন। সুশাসনের কোনো মাপকাঠি নেই। আপনারা বলেন স্পেস ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু কে কাকে স্পেস দেবে? আমি তো আমার স্পেস নিয়ে বসে আছি। আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরান। না হলে স্পেস আমি নিজে স্পেস ছেড়ে দেবো— এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা জনগণ আমাকে স্পেস দিয়েছে। এর মধ্যে কেউ নিয়ম অনুযায়ী স্পেস নিলে কোনো সমস্যা নেই।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আশা করি ডুয়িং বিজনেস পরিবেশ উন্নত হবে।
আইএলও’র সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, বৈষম্য বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জনই উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়। সাম্যের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি হওয়াটাই বড় কথা, যেখানে সবাই কিছু না কিছু কাজকর্ম করে খেতে পারবে। দেশে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা ভারতের সঙ্গে পার্থক্য কমিয়েছি, পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছি। কিন্তু ভিয়েতনাম অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হতে হবে বিনিয়োগ। কিন্তু এজন্য পুঁজি সরবরাহ প্রয়োজন। সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো স্থবির। এজন্য বিনিয়োগ হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যেহারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সে হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এজন্য মানব পুঁজি গঠনে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। বৈষম্য ব্যাপক হারে বাড়ছে। এটি কমিয়ে আনতে হবে। প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা না গেলে দেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়তে পারে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত। তাই বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর আগামী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে আবার শোভন কর্মসংস্থান তৈরি আরও চ্যালেঞ্জ। দেশের প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়ানো সম্ভব যদি নীতি ও পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা যায়।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এরই মধ্যে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো হয়েছে বিভিন্ন খাতে কাঠামোগত সংস্কারের কারণে। শিল্প, কৃষি, ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন খাতে কিছু না কিছু সংস্কার হয়েছে। এর ফলও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এই ফল ধরে রাখতে হলে পরিবহন, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করতে হবে এবং কাঠামোগত সংস্কার চলমান রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যেতে হলে মূল দু’টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে— প্রবৃদ্ধি অর্জন, আর সুশাসন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এম মুর্শিদ বলেন, রফতানিমুখী উন্নয়ন কৌশল থাকলে দেশে বৈষম্য ও বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে। আমাদের উন্নয়ন কৌশল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম বলা হলেও কোথাও লিখিতভাবে নেই।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়ন করতেই হবে। এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতি উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী ১০ বছর যদি ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, তাহলে দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব। বলতে গেলে দারিদ্র্য হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রবৃদ্ধি বৈষম্য