ছিনতাইয়ের শাস্তি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে ২৫ বছর
৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাইয়ের মামলায় সাজা পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিম্ন আদালতে মামলার রায়ের পর ৯ বছর এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রায়ের পর ১৬ বছর মিলিয়ে প্রায় ২৫ বছর পলাতক ছিলেন এই আসামি।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার হাজারী গলি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
গ্রেফতার মো. আসলাম (৫৩) নগরীর হাজারী লেইনে ছবিলা কলোনির মৃত আব্দুল আলীর ছেলে।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৭ সালে নগরীর পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় আসলামকে ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছিল জনতা। ওই মামলায় একমাস জেল খেটে বের হয়ে সে পলাতক হয়ে যায়। এরপর ওই মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাজা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। সাজা হয়। কিন্তু আসলাম গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়। নিম্ন আদালতে সাজার ২৯ বছর পর আদালতের পরোয়ানামূলে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি।’
পুলিশ জানায়, ১৯৮৭ সালে আসলাম ও তার দুই বন্ধু ইয়াছিন এবং জমির মিলে রাতে নগরীর পলোগ্রাউন্ডের ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউটে ভ্যারাইটি শো দেখতে গিয়েছিলেন। সকালে ফেরার সময় তিনজন মিলে এক লোকের টাকা ছিনতাই করে। এসময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে আসলামকে ধরে ফেলে এবং সিআরবি পুলিশ ফাঁড়িতে হস্তান্তর করে। একমাস পর আসলাম জামিনে বের হন।
ওই মামলায় ১৯৯০ সালে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসলামকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পলাতক আসলাম ৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সাজা বাতিল করে আসলামকে খালাস দেন। ২০০৩ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখেন। আপিল বিভাগের রায়ের ১৬ বছর পর সাজামূলে আসলামকে গ্রেফতারের পরোয়ানা পৌঁছে নগরীর কোতোয়ালী থানায়।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯০ সালে রায় ঘোষণার সময় আসলাম পলাতক ছিলেন। ১৯৯৯ পলাতক থাকা অবস্থায় সে হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট খালাস দেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় আসলাম ৯ বছর পলাতক ছিলেন। এরপর আপিল বিভাগে পুনঃসাজার রায় আসে ২০০৩ সালে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যেহেতু তিনি দণ্ডিত ছিলেন না, সুতরাং সেই সময়টা পলাতক ধরা যাবে না। এরপর ২০০৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১৬ বছর আবারও পলাতক ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ বছর সাজা এড়িয়ে তিনি নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন।’
আসলামের সহপাঠি নগরীর হাজারী লেইনের একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে জানান, নগরীর ঘাটফরহাদবেগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন আসলাম। ১৯৮০ সালে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দেন। তখন মাদক ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় ২০ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে জেলে যান। তবে প্রায় ২০ বছর আগে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। হাজারী লেইনে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি এলাকায় আর কোনো অপরাধে জড়াননি।