বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি: ফিলিপাইনের কাছে তথ্য চেয়েছে সরকার
৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৮
ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থের হদিস পেতে এবং অর্থ চুরির মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে ফিলিপাইনের কাছে তথ্য সহায়তা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের এই তথ্য জানান। তার আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় ফিলিপাইনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় (ফরেন অফিস করসালটেশন) বৈঠক করেন মাসুদ বিন মোমেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ফিলিপাইনের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের সহকারী সচিব মেইনার্দো এলবি মন্টিলাগ্রি প্রতিনিধত্ব করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাসুদ বিন মোমেন। প্রায় ৪ বছর পর দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
বৈঠক শেষে সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির যে ঘটনা ঘটেছিল, সে বিষয়ে দুদেশর মধ্যে ফলপ্রসু বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা আলাদাভাবে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মামলা চলমান রয়েছে।’
অর্থ চুরির বিষয়ে ফিলিপাইনের কাছে কয়েকটি বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, ‘অর্থ চুরির মূল হোতাদের পরিচয় সম্পর্কে তথ্য ফিলিপাইনের কাছে জানতে চেয়েছি। এই তথ্য তারা এখনও আমাদের সঙ্গে বিনিময় করেনি। তাই আজকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এছাড়া অর্থ চুরির ঘটনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য তাদের কাছে রয়েছে; সেই তথ্য ফিলিপাইনের প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে বিনিময় করবে বলে আজকের বৈঠকে বলেছে। আশা করছি অর্থ চুরির মূল হোতাদের পরিচয় এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক তথ্যগুলো ফিলিপাইন জানালে বাংলাদেশে অর্থ চুরি নিয়ে যে মামলা চলমান রয়েছে, তা নিষ্পত্তিতে বা চার্জশিট দিতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
সচিব বলেন, ‘অর্থ ফেরতের বিষয়ে ফিলিপাইন এরই মধ্যে আরসিবিসিকে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে। আমরা প্রস্তাব করেছি যে, এই জরিমানার অর্থ বাংলাদেশকে দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ওদের যুক্তি অন্যরকম। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’
‘কিছু অর্থের বিষয়ে এখনো হদিস পাওয়া যায়নি, কিছু অর্থ পাচার হয়ে গেছে’, জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আমরা স্টেপ বাই স্টেপ এগুচ্ছি। তদন্ত চলছে। অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। আরসিবিসিকে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে ফিলিপাইন। এই অর্থের বিষয়ে তারা বলছে যে, আরসিবিসি ব্যাংক ওই দেশের আইন ভঙ্গ করেছে তাই এই জরিমানা গুনতে হয়েছে। কিন্তু জরিমানার এই অর্থের সঙ্গে বাংলাদেশ বাংক থেকে চুরি যাওয়া অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা দাবি জানিয়েছি যে, জরিমানার ওই অর্থ বাংলাদেশকে দেওয়া যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাইবার অপরাধের মাধ্যমে এখন বিশ্বে অর্থ চুরির ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি যে, এই ঘটনায় ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ যদি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বিনিময় করে এই অপরাধের মূল হোতাদের উদ্ঘাটন করতে পারে তবে তা বিশ্বে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রস্তাবে ওরা রাজি আছে বলে জানিয়েছে। এ জন্য তারা তথ্যও বিনিময় করবে। তবে কবে নাগাদ তথ্য দিবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে আরসিবিসি’র সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি তাকে বিভিন্ন অভিযোগে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া জরিমানা করা হয় ১০ কোটি ৯ লাখ ডলার। রায়ে আদালত জানান, হ্যাকিংয়ের অর্থ লেনদেনে মায়া দেগুইতোর সম্পৃক্ততরা প্রমাণ মিলেছে। তিনি অবৈধ ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলায়, আরসিবিসির কাছে চুরি হওয়া অর্থের পাশাপাশি মামলা পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত আইনি খরচসহ ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। সেই মামলায় সম্পৃক্ত মানি এক্সচেঞ্জ, ক্যাসিনোসহ যেসব স্থানে টাকা গেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।