Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দোহাই আপনাদের, দাম কমান, ব্যবসায়ীদের প্রতি মিনতি নানকের


৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৩২

ঢাকা: নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। সরেজমিনে বাজার পরিস্থিতি দেখে ব্যবসায়ীদের কাছে মিনতি জানিয়েছেন দাম কমানোর। অন্তত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক উপ কমিটি এই সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে নানক বলেন, ‘বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। এই বাজারকে লাগামহীন পাগলা ঘোড়া হতে দেওয়া যাবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অস্বস্তিতে রাখলে দেশ অস্বস্তিকর হবে। কাজেই আগামীকাল থেকে যেন সব বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে মানুষের দিকে তাকিয়ে সেই সিদ্ধান্ত নিন।’

বাজার পরিস্থিতি সচক্ষে দেখতে সরেজমিনে নিজেই কিছু বাজার পরিদর্শন করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। পরে সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘কুমিল্লার নিমসার বাজারে যে মালগুলি পাওয়া যায়, সেই নিমসার বাজার থেকে কারওয়ান বাজারে এসে কত হয়, কারওয়ান বাজার থেকে বিক্রি হওয়ার পরে সেই মাল নিউমার্কেট বা টাউন হল মাকের্টে গিয়ে কত হয়? এই জিনিসগুলো বোঝার প্রণান্তকর চেষ্টা করেছি।’

‘আজকের মতবিনিময় সভার কারণে গতকাল রাত ১১টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা করি। আমি সোয়া বারোটায় গিয়ে নিমসার বাজারে পৌঁছাই এবং রাত আড়াইটা পর্যন্ত নিমসার বাজারে আমি বাজার দরটি বোঝার চেষ্টা করেছি।’ যোগ করেন নানক।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সরেজমিনে পেঁয়াজসহ বেশকিছু পণ্যের দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে যান আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সম্পাদক। সেই অভিজ্ঞতায় নানক জানান, ‘আমি সকালে গেলাম আমার মোহাম্মদপুর। যেখানে আমি দুই বার এমপি ছিলাম সেখানকার কৃষি মার্কেটে। সেখানে গিয়ে আমি কি দেখলাম? মানুষের কথা শুনলাম, মানুষ আমাকে কথা শোনাল। আমার কানের ভিতর আঙুল দিয়ে কথা শোনানোর চেষ্টা করল।’

বিদেশ থেকে আমদানির পরেও দেশে পেঁয়াজের কেজি ২শ টাকার ওপরে। এ বিষয় উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজ নিয়ে আলাপ করবো কেন? আপনারা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। তেলের বাজার বাড়েনি? ভোজ্য তেলের দর বাড়েনি, চালের দর বাড়েনি? কেন বাড়ল? কে বাড়ছে আদার দাম, কেন বাড়ছে রসুনের দাম?

‘নিমসার বাজারে যে ফুলকপিটি কিনছেন ৭ টাকায়? সেই ফুলকপি কারওয়ান বাজারে তিন হাত বদলি হয়ে কেন সেখানে ২০ টাকায় বিক্রি হবে? সেই কারওয়ান বাজারের ২০ টাকার কপি এখান থেকে যেতে না যেতেই কৃষি মার্কেটে গিয়ে ৪০ টাকা ৫০ টাকা হয়ে যাবে কেন? এটি মেনে নেওয়া যায় না। এটি কোনো জনবান্ধব সরকার মেনে নিতে পারে না। আর এটি আওয়ামী লীগের মতো দল মেনে নিতে পারে না।’

ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নানক বলেন, ‘দোহাই আপনাদের। এমন একটি দেশে আমরা বসবাস করি। অনেকেই আল্লাহ রাসুলের কথা বলে গিয়েছেন। আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত রয়েছে, এই দেশ এমন এক বিচিত্র দেশ। সারা দুনিয়ায় রমজান মাসে বাজার দর নেমে যায় আর আল্লাহর কি রহমত আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বাজার দর রমজান মাসে হাঁকিয়ে উপরে উঠিয়ে দেয়। এটি লজ্জা। এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে প্রতারণা করা। একদিকে নামাজ পড়ব, আরেকদিকে রোজাদার মানুষকে জিম্মি করে অর্থ উপার্জন করবো, এটা হতে পারে না।’

ব্যবসায়ীদের প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষে অনুরোধ জানিয়ে নানক বলেন, ‘আজকে থেকে সকল ব্যবসায়ীরা এমন একটি সিদ্ধান্ত নেন, মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে। আপনার পিতা, আপনার মা, আপনার ভাই, আপনার বোন, চাচা-মামা যারা এই বাজার থেকে বাজার করে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আপনাদের দর কমিয়ে আনতে হবে। দর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। চালের দাম বাড়বে মেনে নেওয়া যায় না। তেলের দাম বাড়বে মেনে নেয়া যায় না। মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখন ক্ষয়িঞ্চু মধ্যবিত্ততে পরিণত হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।

দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি অসুস্থ পরিস্থিতি চলছে। এই অবস্থায় দায়িত্বশীল একটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিশ্চুপ থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সম্পাদক।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট উপ কমিটির আহ্বায়ক কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আবদুস সাত্তারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

জাহাঙ্গীর কবির নানক নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি বাজারদর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর