এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৭
ঢাকা: ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) কমিশনের নির্ধারিত সভায় এই চাজর্শিটের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এস কে সিনহাসহ আরও যাদের বিরুদ্ধে চাজর্শিট অনুমোদন করা হয়েছে তারা হলেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, গুলশান শাখার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, গুলশান করপোরেট শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান, নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, এস কে সিনহার কথিত পিএস রণজিৎ চন্দ্র সাহা, তার স্ত্রী সান্ত্রী (সিমি) ও দি ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)।
তবে ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ মামলার আসামি থাকলেও তিনি মারা যাওয়ায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর (বাবুল চিশতী) নাম মামলায় না থাকলেও চার্জশিটে নতুন করে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে চার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেন সিনহা। এরপর সেটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর দেখিয়ে আত্মসাৎ ও অর্থপাচার করা হয়। মূলত ফারমার্স ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে দুদকের। এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিনহার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তারা কমিশনে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
এরপর চলতি বছরের ১০ জুলাই বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলাটি করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
আর দুদকের দায়ের করা সেই মামলায় বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়েছেন। আর একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন সেই টাকা। পরে ওই টাকা ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অস্বাভাবিক নগদে এবং চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসাবে হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
এছাড়া মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। এর পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকে হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই তাদের ঠিকানা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করেন। ঋণ আবেদনে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে রঞ্জিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের সাভারে অবস্থিত ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করেন। আর রণজিৎ সাহা হচ্ছেন সিনহার কথিত পিএস। আর ঋণসংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনো রকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণ প্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান।
শুধু তাই নয়, ঐ দিনই প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ নীতি অনুযায়ী ঋণ দুইটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণ প্রস্তাব দুটির অনুমোদন দিয়ে দেন। ফলে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের যোগসাজজে দুর্নীতি করা হয়।
অবশেষে মামলার প্রায় ৫ মাসের আগে কমিশন চার্জশিট অনুমোদন করল।