জামায়াত নেতাকে পাশে বসিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বললেন সৈয়দ ইবরাহিম
৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫২
ঢাকা: ১২ বছর আগে ১/১১ এর উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ছিল দলটির যুগপূর্তির দিন। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কিন্তু তিনি আসেননি। তবে একাত্তরের রণাঙ্গনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের অন্যতম প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ঠিক ঠিক সময় অনুষ্ঠানে হাজির হন। তাকে পাশে বসিয়েই মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। বক্তব্য দিতে উঠে মিয়া গোলাম পরওয়ারও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৯টি মাসের প্রতিটি দিন আমাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। আজকে আপানারা মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে কাছে পাচ্ছেন, রেদোয়ানকে কাছে পাচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, আজাদ মাহমুদ, নজরুল ইসলামকে কাছে পাচ্ছেন। আর ১০ বছর পরে তো পাবেন না। তখন আফসোস হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বাংলাদেশি। অতঃপর আমি রাজনৈতিককর্মী। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ আমি ২২ বছর ৯ মাস বয়সের একজন তরুণ। লেফটেন্যান্ট ইবরাহিম। আখাউড়া রেলওয়ে শহরের উত্তরে আজমপুরে, রেলস্টেশনের দক্ষিণে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে আক্রমণরত ছিলাম।’
সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে চুড়ান্ত যুদ্ধ হয়। ৫দিন ৪ রাতের অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর সকাল বেলা ফজরের আজানের সময় আখাউড়া জেলাতে যেসব পাকিস্তানি ছিল তারা আত্মসমর্পণ করে, পলায়ন করে, নিহত হয়। তখন আখাউড়া আমাদের দখলে চলে আসে। আমার ব্যাটালিয়ন ৩৩টি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মৃতদেহকে একখানে করেছিলাম।‘
‘সেদিন ৪০জনের অধিক পাকিস্তানি সৈন্য পানিতে ডুবে মারা যায়। বেশকিছু সৈন্য আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যায়। আখাউড়া দক্ষিণে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন। আখাউড়ার পূর্বে ছিল ৩ নং সেক্টরের সৈনিকগণ। সম্মিলিত যুদ্ধ ৫দিন ৪ রাত চলেছিল’—বলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির সংগ্রামমুখর চলার পথে জেনারেল ইবরাহিম অগ্রনায়ক, অগ্রসেনানী। জেনারেল ইবরাহিমের নেতৃত্বে কল্যাণ পার্টির যে সংগ্রাম, জাতীয় রাজনীতিতে যে অবদান, তা এ দেশের রাজনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
কল্যাণ পার্টির যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল ইবরাহিমকে অভিনন্দন জানিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি একযুগ পাড়ি দিয়েছে। আজকে এখানে এসে তার দলের সাংগঠনিক শক্তি, নেতৃত্বের দক্ষতা ও তার ঐতিহ্য, যোগ্যতায় আমি অভিভূত। উদ্বোধনী বক্তব্যে সৈয়দ ইবরাহিম যে তার দল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে চিন্তার কথা বলেছেন, টক শো, টেলিভিশনে তার যে মূল্যবোধের পরিচয় পাই, তিনি যে চিন্তা চেতনাকে লালন করেন, তার দলের মধ্যও সেই চিন্তা ধারণ করেন।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। সৈয়দ ইবরাহিমের দলের বিকশিত নীতির মধ্যে তিনি সেটাই উল্লেখ করেছেন। কল্যাণ পার্টি যে সময়টা পার করেছে, সেটা একটা সংগ্রামমুখোর যুগ। অনেক কষ্ট, বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিয়ে কল্যাণ পার্টিকে এগোতে হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, জাগপার মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ অন্যরা।